ভারতীয় বায়ুসেনা যুদ্ধবিমানের তীব্র ঘাটতির মুখোমুখি। অন্যদিকে, ভারতের দুই শত্রুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশ, চীন ও পাকিস্তান, ইতিমধ্যেই তাদের পঞ্চম প্রজন্মের ফাইটার জেট মোতায়েন করেছে। এই পরিস্থিতিতে, দেশের নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

তবে, ভারত সরকার ও সেনাবাহিনী এই চাহিদা সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন। ভারতও তার প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এটি নিয়ে প্রচার করা হচ্ছে না।

সম্প্রতি, মার্কিন সফরের সময়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তাদের সবচেয়ে আধুনিক ৫ম প্রজন্মের ফাইটার জেট F-35 দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে, এই ফাইটার জেট ভারতের চাহিদা কতটা পূরণ করতে পারবে, তা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন। অন্যদিকে, আমেরিকাতেও কিছু বিশেষজ্ঞ এই ফাইটার জেটকে অপ্রয়োজনীয় বলে আখ্যা দিয়েছেন। ফলে, ভারতের জন্য এই ফাইটার জেটের উপর নির্ভর করা সহজ নয়।

রাশিয়ার প্রস্তাব

ভারতের সামনে আরেকটি বিকল্প রয়েছে—রাশিয়ার সুখোই-57 ফাইটার জেট। এটি একটি উন্নত পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান। ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধে রুশ সেনারা এই বিমানের কার্যক্ষমতা ইতিমধ্যেই দেখিয়েছে। কিন্তু ভারতের চাহিদা অনুযায়ী, এটি এখনও পুরোপুরি উপযুক্ত বলে বিবেচিত হচ্ছে না। ফলে, ভারতের সামনে অন্য কী বিকল্প রয়েছে?

ভারত নিজস্ব ফাইটার জেট তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে, তবে সেই প্রকল্পে দেরি হচ্ছে। হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (HAL) নির্ধারিত সময়ে সরবরাহ করতে পারছে না।

এই পরিস্থিতিতে, রাশিয়া ভারতকে নতুন একটি প্রস্তাব দিয়েছে। সুখোই বিমান প্রস্তুতকারী রুশ সংস্থা Rosoboronexport জানিয়েছে যে, ভারত চাইলে খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই সুখোই-57 বিমানের স্থানীয় উৎপাদন শুরু করতে পারে। সংস্থাটি শুক্রবার একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলেছে যে, তারা ভারতের জন্য পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরিতে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

ভারত ইতিমধ্যেই সুখোই-30 এমকেআই যুদ্ধবিমান ব্যবহার করছে, যা 4+ প্রজন্মের অত্যন্ত শক্তিশালী ফাইটার জেট। প্রযুক্তি হস্তান্তর (Technology Transfer) এর অধীনে, ভারতের HAL প্ল্যান্টে এখন পর্যন্ত 222টি সুখোই-30 বিমান সংযোজিত হয়েছে।

সুখোই-60-এর পরিকল্পনা

Rosoboronexport জানিয়েছে যে, ভারত চাইলে সুখোই-30 উৎপাদনের কারখানাকে দ্রুত আপগ্রেড করে সুখোই-57 তৈরির কাজ শুরু করা যেতে পারে। এর পাশাপাশি, সংস্থাটি ভারতের চাহিদা অনুযায়ী একটি সম্পূর্ণ নতুন ফাইটার জেট যৌথভাবে উন্নয়ন করার প্রস্তাব দিয়েছে।

এই নতুন ফাইটার জেট ভারতে নির্মিত হবে, এবং এর প্রতিটি অংশ ও অস্ত্র ভারতের চাহিদা অনুযায়ী ডিজাইন করা হবে। এখন ভারতকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, সে এই প্রস্তাবে কতটা আগ্রহী।

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরাও Rosoboronexport-এর বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত ও রাশিয়া যে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরি করতে চায়, তার সম্ভাব্য নাম সুখোই-60 হতে পারে। এটি সুখোই-57-এর তুলনায় আরও উন্নত প্রযুক্তি ও যুদ্ধের জন্য আরও উপযোগী হবে।

রাশিয়া ভারতকে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান সরবরাহ করতে সর্বাত্মক সহায়তা করতে চায়। ভারতও এই প্রকল্প নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে এগোচ্ছে। কারণ, চীন ইতিমধ্যেই তার বিমান বাহিনীতে দুটি পঞ্চম প্রজন্মের ফাইটার জেট অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং পাকিস্তানকেও এমন বিমান সরবরাহ করেছে।

পাকিস্তান ২০২৯ সালের মধ্যে তার সামরিক বহরে ৫ম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান যুক্ত করতে চলেছে। ফলে, ভারতের জন্য এই নতুন যুদ্ধবিমান প্রকল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।