পাকিস্তানে ক্ষুধার্ত মানুষ মসজিদ ভেঙে তার ইট ও লোহা বিক্রি করে পেট ভরছে! জানুন আসল সত্য

পাকিস্তানে মানুষ এখন মসজিদ ভেঙে তার ইট ও লোহা বিক্রি করে নিজের খাবারের ব্যবস্থা করছে। সম্প্রতি এটি তৃতীয় মসজিদ যা ভেঙে ফেলা হয়েছে। লোকেরা বলছে, “যদি আল্লাহ আমাদের রুটি দিতে না পারেন, তবে মসজিদের দরকার কী?” যে সম্প্রদায় একসময় মন্দির ধ্বংস করে বলত যে শুধুমাত্র আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ, আজ তারাই আল্লাহর ঘর নিজেদের হাতে ভেঙে ফেলছে।
ভাইরাল ভিডিওতে কী দেখা যাচ্ছে?
সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, যেখানে কিছু লোক একটি মসজিদ ভাঙতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওর সঙ্গে দাবি করা হচ্ছে যে পাকিস্তানে অর্থনৈতিক সংকট ও ক্ষুধার কারণে মানুষ ক্ষোভে মসজিদ ভেঙে তার উপকরণ বিক্রি করছে। তবে বিশ্বাস নিউজ-এর তদন্তে এই দাবি বিভ্রান্তিকর প্রমাণিত হয়েছে।
ভিডিওটি পাকিস্তানেরই কিন্তু…
ভাইরাল ভিডিওটি পাকিস্তানের হলেও, এতে দেখা মসজিদ আহমদিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের। পাকিস্তানে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্থাপনাগুলোকে বারবার লক্ষ্যবস্তু করা হয়, কারণ দেশটিতে তাদের অ-মুসলিম হিসেবে গণ্য করা হয়। ফেসবুক ও টুইটারে এই ভিডিওটি বিভ্রান্তিকর দাবি সহ ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হচ্ছে। কিছু ব্যবহারকারী লিখেছেন:
- “পাকিস্তানে ক্ষুধা এতটাই বেড়েছে যে মানুষ মসজিদ ভেঙে লোহা ও ইট বিক্রি করছে। করাচিতে এক মাসে তিনটি মসজিদ ভাঙা হয়েছে।”
- “চারটি বিয়ে করে ২০-৩০টি সন্তান জন্ম দিয়েছে এবং বলেছে এটি আল্লাহর দান, কিন্তু এখন আল্লাহ তাদের খাবার দিচ্ছেন না।”
এই একই দাবি টুইটারেও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে পাকিস্তানে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও ক্ষুধার কারণে মানুষ মসজিদ ভেঙে তার উপকরণ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।
ফ্যাক্ট চেক: আসল সত্য কী?
এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে ৩-৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সালের কিছু প্রতিবেদন পাওয়া যায়, যেখানে এই ভিডিওর সঙ্গে মেলে এমন ছবি প্রকাশিত হয়েছিল। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ভিডিওটি পাকিস্তানের করাচি শহরের। ভিডিওতে থাকা মসজিদটি আহমদিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের। পাকিস্তানে আহমদিয়াদের আনুষ্ঠানিকভাবে অ-মুসলিম হিসেবে গণ্য করা হয় এবং তাদের ধর্মীয় স্থাপনাগুলোকে প্রায়শই হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়। ANI নিউজ এজেন্সি-ও ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সালে এই ঘটনার রিপোর্ট করেছিল। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, করাচির সদর এলাকায় অজ্ঞাত হামলাকারীরা আহমদিয়া মসজিদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে সেটি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
পাকিস্তানে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে কি মসজিদ ভাঙা হচ্ছে?
ফ্যাক্ট চেক করে জানা গেছে, ভাইরাল ভিডিওতে করা দাবি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর। পাকিস্তান বর্তমানে গুরুতর অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে, তবে মসজিদ ভাঙার ঘটনাগুলোর সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। এটি আহমদিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের আক্রমণের আরেকটি ঘটনা।
পাকিস্তানি সাংবাদিক ও ফ্যাক্ট-চেকার লুবনা জারার নাকভিও নিশ্চিত করেছেন যে এই ঘটনা পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
পাকিস্তানে আহমদিয়া মসজিদে হামলা নতুন কিছু নয়
পাকিস্তানে আহমদিয়া সম্প্রদায় বহুদিন ধরে বৈষম্য ও সহিংসতার শিকার হচ্ছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা:
- ২০১৬: পাঞ্জাবে আহমদিয়া মসজিদের ওপর হামলা হয় এবং ৩,০০০ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
- ২০২২: পাঞ্জাবে একটি আহমদিয়া মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়, কারণ উগ্রপন্থীরা দাবি করেছিল যে আহমদিয়াদের মসজিদ নির্মাণের অধিকার নেই।
- ২০২৩: করাচিতে একাধিকবার আহমদিয়া মসজিদের ওপর হামলা চালানো হয় এবং তাদের ধর্মীয় প্রতীক জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়া হয়।
Pakistan: Ahmadi mosque in Karachi desecrated by unknown attackers
— ANI Digital (@ani_digital) February 3, 2023
Read @ANI Story | https://t.co/n69bAp9V9X#Pakistan #AhmadiMosque #Karachi pic.twitter.com/bIrmcVLGpb