আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (ICC) ক্রিকেটের বৈশ্বিক শাসন সংস্থা। এটি ১৯০৯ সালে লন্ডনে ‘ইম্পেরিয়াল ক্রিকেট কনফারেন্স’ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্রিকেট সংক্রান্ত সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম তৈরির দায়িত্ব আইসিসির, এবং সমস্ত প্রধান ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজনও এই সংস্থাই করে।

আইসিসির ইতিহাস বেশ পুরনো। ১৯৬৫ সালে এর নাম পরিবর্তন করে ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কনফারেন্স’ রাখা হয় এবং ১৯৮৭ সালে এটি ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল’ নামে পরিচিত হয়। কিন্তু বর্তমানে আইসিসির সদর দপ্তর দুবাইয়ে অবস্থিত। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, কেন আইসিসির সদর দপ্তর লন্ডন থেকে দুবাই স্থানান্তর করা হলো?

কেন আইসিসির সদর দপ্তর দুবাই স্থানান্তরিত হয়েছিল?

প্রায় ৯৬ বছর ধরে আইসিসির সদর দপ্তর লন্ডনেই ছিল। কিন্তু পরে এটি দুবাইয়ে স্থানান্তর করা হয়। এর পেছনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল, যার মধ্যে ব্যয় বৃদ্ধি এবং পর্যাপ্ত স্থান সংকট প্রধান কারণ। পাশাপাশি, দুবাইয়ের কর-সংক্রান্ত নিয়মের নমনীয়তা এবং ক্রিকেটের ক্ষমতা এশিয়ার দিকে স্থানান্তর হওয়া, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অন্যতম কারণ ছিল।

সেই সময় লন্ডনে সদর দপ্তর পরিচালনা করা আইসিসির জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছিল। এরপর সেই সময়কার আইসিসি সভাপতি অহসান মানি এবং প্রধান নির্বাহী ম্যালকম স্পিড এ বিষয়ে উদ্যোগ নেন এবং সদর দপ্তর দুবাই স্থানান্তরের কাজ করেন।

দুবাইয়ে সদর দপ্তর স্থানান্তরের ফলে ক্রিকেট বোর্ডগুলোর সুবিধা

যখন আইসিসি এই সিদ্ধান্ত নেয়, তখন অনেক ক্রিকেট খেলিয়ে দেশের ইংল্যান্ডের সঙ্গে ডাবল ট্যাক্সেশন এগ্রিমেন্ট ছিল না। এর অর্থ, ইংল্যান্ডে তাদের আর্থিক লেনদেনে বেশি কর দিতে হতো। অন্যদিকে, দুবাই সম্পূর্ণ করমুক্ত দেশ, যা আইসিসির জন্য লাভজনক ছিল।

দুবাইয়ে সদর দপ্তর স্থানান্তর করার ফলে আইসিসি তার আর্থিক ব্যবস্থাপনায় অধিক নমনীয়তা পায় এবং বিপুল পরিমাণ কর সাশ্রয় করতে সক্ষম হয়, যা আর্থিক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

এশিয়ায় ক্রিকেটের আধিপত্য ছিল বড় কারণ

২০০০ সালের পর থেকে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা ইউরোপের তুলনায় এশিয়ায় অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। লন্ডনে সদর দপ্তর থাকায় ইংল্যান্ড এবং পশ্চিমা দেশগুলোর ক্রিকেট প্রশাসনে প্রভাব বেশি ছিল, কিন্তু সেই সময় ক্রিকেটের মূল কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল দক্ষিণ এশিয়া।

বিশেষত, ভারত ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বাজারে পরিণত হয়, যেখানে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা সর্বাধিক ছিল। এশিয়া ক্রিকেটের নতুন শক্তি হয়ে উঠছিল এবং এশিয়ার গুরুত্ব বাড়ছিল। এই কারণেই আইসিসিকে লন্ডন থেকে দুবাইয়ে সদর দপ্তর স্থানান্তর করতে হয়েছিল।