প্রাক্তন গভর্নর মার্ক কার্নি হবেন কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী, জাস্টিন ট্রুডোর জায়গা নেবেন

প্রাক্তন গভর্নর মার্ক কার্নি হবেন কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী, জাস্টিন ট্রুডোর জায়গা নেবেন

কানাডার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের প্রাক্তন গভর্নর মার্ক কার্নিকে কানাডার শাসক লিবারেল পার্টির নতুন নেতা নির্বাচিত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে তিনি দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন।

তিনি জাস্টিন ট্রুডোর স্থলাভিষিক্ত হবেন, যিনি চলতি বছরের শুরুতে পদত্যাগ করেছিলেন। ৫৯ বছর বয়সী কার্নি দলের ৮৬ শতাংশ সদস্যের ভোট পেয়েছেন।

রাজনীতিতে নবাগত কার্নি যুক্তি দিয়েছেন যে তিনি দলকে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা চালাতে সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি। ট্রাম্প অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন, যা কানাডার রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে।

কানাডার ইতিহাসে এই প্রথমবার এমন কেউ প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন, যার কোনো রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই। কার্নি বলেছেন, দুটি G7 কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতার কারণে তিনিই ট্রাম্পের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি।

কে এই মার্ক কার্নি?

মার্ক কার্নির জন্ম কানাডার নর্থওয়েস্ট টেরিটরিজের ফোর্ট স্মিথ শহরে। শৈশব কেটেছে এডমন্টনে। পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর যুক্তরাজ্যে চলে যান, যেখানে তিনি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে প্রথমে স্নাতকোত্তর এবং পরে ১৯৯৫ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।

২০০৮ সালে কার্নিকে ব্যাংক অব কানাডার গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁর নেতৃত্ব দ্রুত স্বীকৃতি পায় এবং ২০১০ সালে টাইম ম্যাগাজিন তাঁকে বিশ্বের ২৫ জন সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতার একজন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।

২০১১ সালে রিডার্স ডাইজেস্ট কানাডা তাঁকে ‘সর্বাধিক বিশ্বস্ত কানাডিয়ান’ ঘোষণা করে এবং ২০১২ সালে ইউরোমনি ম্যাগাজিন তাঁকে “সেন্ট্রাল ব্যাংক গভর্নর অফ দ্য ইয়ার” খেতাব দেয়।

২০১৩ সালে কার্নি ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর হন। তিনিই এই প্রতিষ্ঠানের ৩০০ বছরের ইতিহাসে প্রথম অ-ব্রিটিশ ব্যক্তি হিসেবে নেতৃত্ব দেন। ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কার্নি জাতিসংঘের জলবায়ু কার্যক্রম ও অর্থায়নবিষয়ক বিশেষ দূত এবং ব্রুকফিল্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টে ট্রানজিশন ইনভেস্টিং বিভাগের প্রধান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে, তিনি এসব পদ থেকে পদত্যাগ করে কানাডার লিবারেল পার্টির নেতা হওয়ার দৌড়ে নামার সিদ্ধান্ত নেন।

ট্রুডোর বিদায়ী ভাষণ

জাস্টিন ট্রুডো সোমবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজের শেষ ভাষণ দিয়েছেন। বিদায়ী ভাষণে তিনি জনগণকে দেশের ভবিষ্যৎ গঠনে অবদান রাখার আহ্বান জানান।

লিবারেল পার্টির সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রুডো তাঁর শাসনামল নিয়ে গর্ব প্রকাশ করে বলেন, “আমাকে ভুল বুঝবেন না, গত ১০ বছরে আমরা যা কিছু অর্জন করেছি, তাতে আমি গর্বিত। কিন্তু আজকের রাত এক দলের নয়, বরং পুরো জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবার সময়।”

তিনি অর্থনৈতিক উদ্বেগ নিয়ে কথা বলেন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, “আমরা এমন একটি দেশ, যেখানে যখনই লড়াই করার প্রয়োজন হবে, আমরা লড়তে প্রস্তুত থাকব।”

তিনি বর্তমান পরিস্থিতিকে জাতির জন্য সংজ্ঞায়িত করার মতো মুহূর্ত হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, “গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এর জন্য সাহস, ত্যাগ, আশা এবং কঠোর পরিশ্রম দরকার। আমাদের গত ১০ বছরে অর্জিত সাফল্যের দিকে তাকিয়ে থেমে থাকা উচিত নয়। বরং আগামী ১০ বছর এবং ভবিষ্যৎ দশকগুলোতে আরও বড় কিছু অর্জনের লক্ষ্য স্থির করা উচিত।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *