কংগ্রেসে বারাতের ঘোড়াগুলোকে রেসে পাঠানোর দুঃসাহস কে করে? রাহুল গান্ধী কাকে টার্গেট করলেন?

কংগ্রেসে বারাতের ঘোড়াগুলোকে রেসে পাঠানোর দুঃসাহস কে করে? রাহুল গান্ধী কাকে টার্গেট করলেন?

গুজরাটে বিধানসভা নির্বাচন এখনও দুই বছর পর। প্রায় তিন দশক ধরে এখানে বিজেপি ক্ষমতায় রয়েছে, যদিও একসময় গোটা দেশের মতো কংগ্রেসেরই আধিপত্য ছিল। সম্ভবত এই কারণেই কংগ্রেস মনে করছে যে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তাদের জন্য কিছু ভালো হতে পারে।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর পুরো উদ্দীপনার সঙ্গে গুজরাট পৌঁছানোর এটিই কারণ হতে পারে। সাধারণত কংগ্রেস শেষ মুহূর্তে নির্বাচনী প্রচার শুরু করে, প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে। কিন্তু এবার রাহুল ও কংগ্রেস কিছুটা বেশি সক্রিয় মনে হচ্ছে। রাহুল কংগ্রেস কর্মীদের উজ্জীবিত করতে গুজরাট গিয়েছেন, যাতে তারা আগামী বিধানসভা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হতে পারে। কিন্তু তিনি এমন কিছু কথা বলেছেন, যা কংগ্রেস কর্মীদের মোটিভেট করার বদলে তাদের আরও বেশি হতাশ করেছে।

১. রাহুলের বক্তব্যে দলের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব বাড়ার আশঙ্কা

রাহুল বলেন, “আমি কংগ্রেস পার্টির সদস্য এবং মঞ্চ থেকে বলতে চাই যে গুজরাট কংগ্রেস জনগণকে সঠিক পথ দেখাতে পারছে না।” তিনি আরও বলেন, “গুজরাট কংগ্রেসে দুই ধরনের মানুষ আছেন। একদল যারা জনগণের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছেন এবং যাদের হৃদয়ে কংগ্রেসের আদর্শ রয়েছে।” রাহুল আরও বলেন, “অন্যরা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং তাদের মধ্যে অনেকেই বিজেপির সঙ্গে যুক্ত। যতক্ষণ না আমরা এদের আলাদা করব, ততক্ষণ গুজরাটের জনগণ আমাদের বিশ্বাস করবে না। আমাদের কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। যদি ১০, ১৫, ২০, ৩০ জনকে বের করে দিতে হয়, তাহলে তাই করতে হবে। যারা বিজেপির হয়ে কাজ করছে, তারা বাইরে গিয়ে করুক, এখানে তাদের জায়গা নেই।”

এমন বক্তব্যের কারণে দলীয় কোন্দল আরও বাড়তে পারে। এখন প্রতিটি গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীকে বিজেপির ‘বি-টিম’ প্রমাণ করার চেষ্টা করবে। ক্ষমতায় থাকা দলের সঙ্গে কিছু সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে হয়, যাতে ব্যক্তিগত স্বার্থ বজায় থাকে। রাহুলের এই বক্তব্যের পরে দেখা যাবে যে অনেক নিষ্ঠাবান নেতা আঘাত পাবেন এবং দল থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হবেন।

২. কে ৫০ বছর অপেক্ষা করে?

রাহুল গান্ধী গুজরাটের আগামী বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের কথা বলছেন এবং তিনি কংগ্রেস কর্মীদের ২০২৭ সালের জন্য প্রস্তুত করতে চান। তবে তিনি বলেন যে গুজরাটে কংগ্রেসকে পুনরুজ্জীবিত করতে ৫০ বছর সময় লাগবে। কোনও রাজনৈতিক নেতা তার কর্মীদের এমন কথা কীভাবে বলতে পারেন?

আজকের প্রজন্মের জন্য ৫ বছরও অনেক বেশি, আর রাহুল বলছেন ৫০ বছরের কথা! এক কবির উক্তি আছে, “জিন্দা কওমে পাঁচ বছর অপেক্ষা করে না,” আর এখানে রাহুল বলছেন ৫০ বছরের কথা! তিনি বলেন, “এখন আমাদের নির্বাচন নিয়ে কথা বলা উচিত নয়। আমাদের প্রকল্প ৫০ বছরের, আমাদের কংগ্রেসের আদর্শকে জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে।”

৩. প্রতিটি দলে এ ধরনের লোক থাকে, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলতে হয়

রাহুল গান্ধী বলেন, “গুজরাট কংগ্রেসের নেতৃত্বে দুই ধরনের মানুষ আছেন—একদল জনগণের পাশে, আরেকদল জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন, যাদের মধ্যে অনেকেই বিজেপির সঙ্গে যুক্ত। আমার দায়িত্ব হলো এই দুই গোষ্ঠীকে আলাদা করা। যারা দলের মধ্যে বিজেপির ‘বি-টিম’ হয়ে বসে আছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।”

প্রকৃতপক্ষে, কোনও দল যখন বিরোধী দলে থাকে, তখন তার মধ্যে এ ধরনের মানুষ থাকেই। কিন্তু রাজনীতিতে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলতে হয়। বিজেপি তিন দশক ধরে গুজরাটে ক্ষমতায়, তবে সেখানেও অনেকে রয়েছেন যারা বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চান। নেতৃত্ব এই ধরনের পরিস্থিতি সামলানোর কৌশল জানে।

৪. মানুষ কংগ্রেসকে বিকল্প হিসেবে কেন দেখবে?

রাহুল বলেন, “গুজরাট আটকে আছে, সে এগোতে চায়। কিন্তু কংগ্রেস তাকে পথ দেখাতে পারছে না।” তবে তিনি ২০২২ সালের নির্বাচনে মাত্র একটি জনসভা করেছিলেন। যখন তিনি নিজেই সক্রিয় ছিলেন না, তখন অন্যদের থেকে কী আশা করা যায়?

২০২২ সালে গুজরাট নির্বাচনে বিজেপি ১৮২টির মধ্যে ১৫৬টি আসন জিতেছিল, কংগ্রেস মাত্র ১৭টি আসন পেয়েছিল। নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী আপ (AAP) কংগ্রেসের ১৩% ভোট কেটে নেয়। নির্বাচনের এক বছর পর থেকেই কংগ্রেস বিধায়কেরা বিজেপিতে যোগ দিতে শুরু করেন। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে ৪ জন বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দেন এবং উপনির্বাচনে বিজেপি তাদেরই প্রার্থী করে জিতিয়ে আনে। বর্তমানে বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ১৬১।

৫. রেসের ঘোড়াকে বারাতের ঘোড়া বানানোর জন্য দায়ী কে?

রাহুল গান্ধী বলেন, “কংগ্রেস রেসের ঘোড়াকে বারাতের ঘোড়া বানিয়ে দেয় এবং বারাতের ঘোড়াকে রেসে পাঠিয়ে দেয়।”

রাহুলের এই কটাক্ষ কাদের উদ্দেশ্যে? রেসের ঘোড়াকে বারাতের ঘোড়া বানানোর জন্য দায়ী কে? কংগ্রেস কর্মীরা, মল্লিকার্জুন খাড়গে, নাকি সোনিয়া গান্ধী? এই প্রশ্নের উত্তর সম্ভবত রাহুলের কাছেই রয়েছে।

রাজস্থানে শচীন পাইলটকে নেতৃত্ব না দেওয়ার সিদ্ধান্ত কে নিয়েছিল? পাঞ্জাবে ক্যাপ্টেন অমরিন্দর ও নভজোত সিং সিধুকে কে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়িয়েছিল? আসামে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ও মধ্যপ্রদেশে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে ধরে রাখতে রাহুল গান্ধী কী করেছিলেন?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর স্পষ্ট: নেতৃত্বের অভাব এবং দলীয় গঠনের দুর্বলতা। রাহুল গান্ধীর এই আত্মসমালোচনা যদি দলের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে না পারে, তাহলে কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ গুজরাটে আরও সংকটে পড়বে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *