দুটি সিম কার্ড থাকলে শাস্তি, এবার এমন ব্যক্তিদের জরিমানা করা হবে, জেনে নিন পুরো বিষয়টি!

আজকের যুগে স্মার্টফোন সবার জীবনের একটি অংশ হয়ে উঠেছে। কথা বলা, বার্তা পাঠানো বা ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাই হোক না কেন, প্রতিটি কাজের জন্য স্মার্টফোন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
প্রতিটি স্মার্টফোনে কমপক্ষে দুটি সিম ঢোকানোর সুবিধা থাকে, যাকে ডুয়াল সিম ফোন বলা হয়। তাদের সুবিধার জন্য, লোকেরা দুটি নম্বর রাখে – একটি ব্যক্তিগত কাজের জন্য এবং অন্যটি অফিসিয়াল বা অন্যান্য প্রয়োজনের জন্য। কিন্তু এখন ভারতের টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি, অর্থাৎ ট্রাই এমন একটি স্কিম আনতে চলেছে, যা এই ডুয়াল সিম ব্যবহারকারীদের পকেটের উপর ভারী প্রমাণিত হতে পারে। এই খবর শুনে সবাই অবাক, কারণ এর পরে মোবাইল ব্যবহারের ধরণ বদলে যেতে পারে।
ট্রাইয়ের নতুন পরিকল্পনা
ট্রাই সম্প্রতি একটি বড় তথ্য দিয়েছে, যার মতে, যারা তাদের ফোনে দুটি সিম কার্ডই সক্রিয় রাখেন না তাদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। আজকাল বেশিরভাগ মানুষ দুটি সিম কার্ড রাখে, কিন্তু তারা একটি খুব কম ব্যবহার করে অথবা একেবারেই ব্যবহার করে না। ট্রাই বলছে যে এই ধরনের নিষ্ক্রিয় নম্বরের কারণে দেশে মোবাইল নম্বরের অভাব রয়েছে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য, TRAI টেলিকম কো ম্পা নিগুলির উপর চাপ দিচ্ছে যাতে তারা এই নম্বরগুলি বন্ধ করে দেয় অথবা তাদের জন্য কিছু টাকা চার্জ করে। যদি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়, তাহলে টেলিকম কো ম্পা নিগুলি ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে এই অর্থ আদায় করতে পারবে, যার অর্থ হল লোকেরা কোনও কল না করলেও প্রতি বছর অতিরিক্ত চার্জ দিতে হবে।
নিষ্ক্রিয় সংখ্যা সম্পর্কে সত্য
ট্রাইয়ের নিয়ম অনুযায়ী, যদি কোনও মোবাইল নম্বর দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার না করা হয়, তাহলে সেটিকে কালো তালিকাভুক্ত করা উচিত। এর পরে, টেলিকম কো ম্পা নিগুলির উচিত এই ধরনের নম্বরগুলি বাজারে ফিরিয়ে আনা যাতে নতুন ব্যবহারকারীরা নম্বরগুলি পেতে পারেন। কিন্তু কো ম্পা নিগুলি এটি করা এড়িয়ে চলে কারণ তারা ভয় পায় যে এর ফলে তাদের গ্রাহক হ্রাস পাবে। অনেকে দ্বিতীয় নম্বরটি ব্যবহার না করলেও, কেবল এটি তাদের কাছে রাখার জন্য রাখেন। ট্রাই বিশ্বাস করে যে এই পদ্ধতিটি সঠিক নয় এবং এটি সংখ্যার অপচয় ঘটাচ্ছে। এখন TRAI টেলিকম কো ম্পা নিগুলির উপর জরিমানা আরোপের কথা ভাবছে, যার বোঝা শেষ পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের উপরই পড়বে।
সংখ্যার অভাবের সমস্যা
ভারতের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে, মোবাইল নম্বরের প্রয়োজনীয়তাও বাড়ছে। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ নতুন সিম কার্ড কেনেন এবং তাদের নতুন নম্বরের প্রয়োজন হয়। কিন্তু TRAI বলছে যে বর্তমানে সংখ্যার অভাব রয়েছে। এর প্রধান কারণ হল মানুষ দুটি সিম কার্ড রাখে, যার মধ্যে একটি সিম প্রায়শই নিষ্ক্রিয় থাকে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ তার প্রথম নম্বরটি প্রতিদিন ব্যবহার করে, কিন্তু দ্বিতীয় নম্বরটি কেবল ব্যাংক অ্যাকাউন্টের জন্য বা নির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্যে রাখে। এই পরিস্থিতিতে, দ্বিতীয় নম্বরটি অব্যবহৃত থেকে যায় এবং নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য নম্বরটি অনুপলব্ধ হয়ে যায়। ট্রাই এই সমস্যার অবসান চায়।
ব্যবহারকারীরা প্রভাবিত হবেন
যদি ট্রাইয়ের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়, তাহলে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে মোবাইল ব্যবহারকারীদের পকেটে। এতদিন মানুষ কোনও চিন্তা ছাড়াই দুটি সিম রাখত, কিন্তু এখন তাদের প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট চার্জ দিতে হতে পারে। যে সকল নম্বর সক্রিয় নয়, তাদের উপর এই চার্জ আরোপ করা হবে। এর মানে হল, আপনি যদি আপনার দ্বিতীয় সিম থেকে কল না করেন, রিচার্জ না করেন বা বার্তা না পাঠান, তবুও আপনাকে টাকা দিতে হবে। টেলিকম কো ম্পা নিগুলি বার্ষিক এই ফি নিতে পারে, যার কারণে ব্যবহারকারীরা তাদের নম্বর ব্যবহার না করলেও ধরে রাখার জন্য মূল্য দিতে হবে। যারা শুধুমাত্র নম্বর রাখার জন্য দ্বিতীয় সিম রাখেন, তাদের জন্য এই খবরটি ঝামেলার কারণ হতে পারে।
টেলিকম কো ম্পা নিগুলির বাধ্যবাধকতা
টেলিকম কো ম্পা নিগুলি এই বিষয়ে তাদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে। তারা বলে যে নিষ্ক্রিয় নম্বরগুলি বন্ধ করে দিলে তাদের গ্রাহক সংখ্যা হ্রাস পেতে পারে। আজকের সময়ে, প্রতিটি কো ম্পা নি তার ব্যবহারকারীদের ধরে রাখার জন্য নতুন নতুন অফার দেয়। যদি তারা নম্বরটি বন্ধ করে দেয়, তাহলে লোকেরা অন্য কো ম্পা নির সিম নিতে পারবে, যা তাদের ক্ষতি করবে। কিন্তু TRAI-এর ক্রমবর্ধমান চাপের কারণে, এখন তাদের কিছু একটা করতে হবে। যদি TRAI তাদের উপর জরিমানা আরোপ করে, তাহলে তারা কেবল ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে এই অর্থ আদায় করবে। এইভাবে, এই সমস্ত বোঝা শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের উপর পড়বে, এবং তাদের জীবন একটু বেশি ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে।
জনগণের প্রতিক্রিয়া
এই খবর প্রকাশের পর, মানুষ নানান কথা বলছে। কিছু মানুষ ট্রাইয়ের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ এবং বলছেন যে এটি তাদের অর্থের অপচয়। তারা বিশ্বাস করে যে যদি তারা দ্বিতীয় সিম ব্যবহার না করে, তাহলে কেন তাদের এর জন্য অর্থ প্রদান করতে হবে। একই সাথে, কিছু লোক এটিকে ন্যায্যতা দিচ্ছেন এবং বলছেন যে এটি সংখ্যার ঘাটতি কাটিয়ে উঠবে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই আলোচনা জোরেশোরে চলছে। কেউ কেউ বলছেন যে এটি সরকারের জন্য অর্থ উপার্জনের একটি নতুন উপায়, আবার কেউ কেউ এটিকে টেলিকম কো ম্পা নিগুলির অবহেলার ফল হিসেবে বিবেচনা করছেন। এই প্রকল্পটি কখন এবং কীভাবে বাস্তবায়িত হবে তা জানার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে।
এরপর কি হবে?
যদি TRAI-এর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়, তাহলে মোবাইল ব্যবহারকারীদের তাদের অভ্যাস পরিবর্তন করতে হতে পারে। মানুষ হয় তাদের দুটি সিমই সক্রিয় রাখার চেষ্টা করবে, অথবা অন্য সিমটি বন্ধ করে দেবে। এর ফলে টেলিকম কো ম্পা নিগুলিকেও তাদের পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে হতে পারে। হয়তো তারা এমন অফার আনবে যা মানুষকে উভয় সিম ব্যবহার করতে উৎসাহিত করবে। কিন্তু যদি এটি না ঘটে, তাহলে ব্যবহারকারীদের প্রতি বছর অতিরিক্ত চার্জ দিতে হবে। এই পরিবর্তন মোবাইল ব্যবহারের ধরণকে নতুন করে আকার দিতে পারে এবং মানুষের পকেটে প্রভাব ফেলতে পারে।
সতর্ক থাকা প্রয়োজন
এই খবরের পর, মোবাইল ব্যবহারকারীদের সতর্ক থাকা দরকার। যদি আপনার দুটি সিম থাকে এবং আপনি একটি ব্যবহার না করেন, তাহলে এখন আপনাকে ভাবতে হবে যে এটি রাখা ঠিক হবে কিনা। TRAI-এর এই পরিকল্পনা এখনও সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়নি, তবে যদি এটি ঘটে, তাহলে আপনি প্রস্তুত থাকবেন