ট্রাম্প-মাস্ক জুটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া… মার্কিন অর্থনীতি থেকে শেয়ার বাজারে হাহাকার, টেসলার সবচেয়ে খারাপ অবস্থা!

ট্রাম্প-মাস্ক জুটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া… মার্কিন অর্থনীতি থেকে শেয়ার বাজারে হাহাকার, টেসলার সবচেয়ে খারাপ অবস্থা!

আমেরিকা বিশ্বশক্তি, এলন মাস্ক (Elon Musk) বিশ্বের সবচেয়ে ধনী শিল্পপতি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এলন মাস্ক প্রকাশ্যে ট্রাম্পকে সমর্থন করেছিলেন। এরপর ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরই এলন মাস্ক ‘কিংমেকার’-এর ভূমিকায় দেখা যেতে শুরু করেন।

মার্কিন অর্থনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্তগুলোতেও মাস্কের উপস্থিতি দেখা যেতে লাগল। ট্রাম্পও মাস্কের সঙ্গে একমত হতে শুরু করলেন।

ট্রাম্পের ট্যারিফ নীতির প্রভাব

এর মধ্যেই ট্রাম্প ট্যারিফ নিয়ে আগ্রাসী অবস্থান নিলেন। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ স্লোগান ঠিকই ছিল, তবে অন্যান্য দেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করে সেই স্বপ্ন সফল হবে না বলেই মনে হচ্ছে। শপথ গ্রহণের পর থেকেই ট্রাম্প একতরফা ট্যারিফ ঘোষণা করতে থাকেন। চীন, কানাডা, মেক্সিকো ও ভারতের মতো দেশগুলোর ওপর কড়া নীতিমালা চাপানো হয়। তার ধারণা ছিল, এতে অন্য দেশগুলো চাপে পড়বে। তবে বাস্তবে চীন ও কানাডা ট্রাম্পের ট্যারিফের কড়া জবাব দিয়েছে, যার ফলে এখন আমেরিকার ওপরই এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

ট্রাম্পের চাল ব্যুমেরাং হতে পারে?

গত কয়েকদিন ধরে ট্রাম্পের কৌশল উল্টো আমেরিকার জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মার্কিন অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা প্রবল হচ্ছে। সোমবার মার্কিন শেয়ার বাজারে বড় পতন দেখা যায়। নভেম্বর ২০২৩-এর পর প্রথমবার ডাও জোন্স (Dow Jones) ২০০ DMA-এর নিচে বন্ধ হয়েছে।

ন্যাসড্যাক (Nasdaq) ৪% পতনের শিকার হয়েছে, যা সেপ্টেম্বর ২০২২-এর পর একদিনে সর্বোচ্চ পতন। এই পতনের সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছেন এলন মাস্ক। বলা হচ্ছে, মাস্কের কো ম্পা নি টেসলা (Tesla)-এর দরপতনের কারণেই ন্যাসড্যাক এতটা নেমে গেছে। S&P 500-ও ২% এর বেশি পড়ে গেছে।

মার্কিন অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা

ট্রাম্পের ট্যারিফ নীতির কারণে মার্কিন অর্থনীতি ধীরগতির আশঙ্কার মুখে পড়েছে। কিছু অর্থনীতিবিদ বলছেন, ট্রাম্প যেভাবে বৈশ্বিক ট্যারিফ যুদ্ধ শুরু করেছেন, তার প্রধান শিকার এখন আমেরিকাই হচ্ছে। এর ফলে বাজারে মন্দা দেখা দিচ্ছে এবং মার্কিন শেয়ার বাজারেও ব্যাপক অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে।

ট্রাম্প পিছু হটছেন?

যখন আমেরিকা বুঝতে পারল যে, ট্যারিফ যুদ্ধ তাদেরই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে, তখন ট্রাম্প প্রশাসন সমঝোতার পথে হাঁটতে শুরু করেছে। কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর চাপানো ট্যারিফ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে, আর ভারতের সঙ্গে ট্রাম্প নিজেই চুক্তির কথা বলছেন। তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় যেভাবে এলন মাস্ক ও ট্রাম্পের জুটি তৈরি হয়েছিল, এখন সেই মাস্কই সবচেয়ে বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

টেসলার বড় ধস

সোমবার বাজারে সবচেয়ে বেশি পতন টেসলার শেয়ারে দেখা গেছে। টেসলার শেয়ার ১৫.৪৩% কমে ২২২.১৫ ডলার-এ পৌঁছে গেছে। টেসলার শেয়ার পড়তেই ন্যাসড্যাক ৪% পর্যন্ত পড়ে যায়। অর্থাৎ, আমেরিকার নতুন নীতির ফলে সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এলন মাস্ক।

মাত্র দুই মাস আগেই (ডিসেম্বর ২০২৩) টেসলার শেয়ার ছিল ৪৮৮.৫৪ ডলার, যা এখন নেমে ২২২.১৫ ডলার-এ এসেছে। অর্থাৎ, মাত্র দুই মাসে ৫০% এর বেশি পতন হয়েছে। টেসলা আমেরিকার অন্যতম বৃহৎ কো ম্পা নি, এবং সাম্প্রতিক সময়ে এত বড় পতন অন্য কোনো বড় আন্তর্জাতিক কো ম্পা নির ক্ষেত্রে দেখা যায়নি।

২৪ ঘণ্টায় এলন মাস্কের ২.৫ লাখ কোটি টাকার লোকসান

টেসলার শেয়ার ধসের কারণে এলন মাস্কের মোট সম্পদেও বড় ধাক্কা লেগেছে। মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার ২৯ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ২.৫ লাখ কোটি টাকা) ক্ষতি হয়েছে, এবং তার মোট সম্পত্তি কমে ৩০১ বিলিয়ন ডলার-এ নেমে এসেছে। এই বছর এখন পর্যন্ত মাস্কের সম্পদ ১৩২ বিলিয়ন ডলার কমে গেছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এলন মাস্ক মাত্র দুই মাসে যত সম্পদ হারিয়েছেন, তা বিশ্বের বহু শীর্ষ ধনী ব্যক্তির মোট সম্পদের চেয়েও বেশি।

ট্রাম্প প্রশাসনে এলন মাস্কের ভূমিকা

ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট (US President Donald Trump) হলেন, তখনই এলন মাস্ককে বড় দায়িত্ব দেওয়া হয়। ট্রাম্প সরকারি দক্ষতা বিভাগ (DOGE) গঠন করে এর দায়িত্ব মাস্কের হাতে তুলে দেন। মাস্ক সম্প্রতি এক বিবৃতিতে স্বীকার করেছেন যে, তার ওপর থাকা এই দায়িত্ব সামলানো খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। ফক্স বিজনেসের উপস্থাপক ল্যারি কুডলোর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মাস্ক বলেন, “এগুলো সামলানো সত্যিই খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *