চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের কাছে হারের পর নিউজিল্যান্ডের মিডিয়ায় পাকিস্তান নিয়ে কী আলোচনা হচ্ছে
ভারতের কাছে হারের পর নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার
নিউজিল্যান্ডের দল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫-এর ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে ফিরে গেছে, তবে এখন সেখানকার মিডিয়ায় এটি নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে।
নিউজিল্যান্ডের প্রধান সংবাদপত্র দ্য নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড তার প্রতিবেদনে লিখেছে, ”১.৪৩৮ বিলিয়ন জনসংখ্যার ভারত, যেখানে ক্রিকেট নিয়ে উন্মাদনা চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তারা মুম্বাইয়ের থেকেও কম জনসংখ্যার দেশ নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে।”
ভারতের জয়ের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড লিখেছে, ”ভারতের স্পিন বোলিং এই জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এই টুর্নামেন্টে ভারত ছিল সেরা দল, তবে কিছু বিষয় তার পক্ষে ছিল। পাকিস্তান এই টুর্নামেন্টের আয়োজক ছিল, কিন্তু ভারত সেখানে খেলার অনীহা প্রকাশ করে। ফলে ভারত তার সব পাঁচটি ম্যাচ দুবাইতেই খেলেছে। ভারতের দল দুবাইয়ের মাঠে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল এবং ভ্রমণের সমস্যাও ছিল না। যখন আগে থেকেই জানা থাকে ম্যাচ কোথায় হবে, তখন সেই অনুযায়ী ১৫ সদস্যের দল গঠন করা সহজ হয়ে যায়।”
নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড লিখেছে, ”রবিবারের ফাইনালে ভারতের একাদশে মোট ছয়জন বোলার ছিলেন, যার মধ্যে চারজন স্পিনার। ৫০ ওভারের মধ্যে ভারতের স্পিনাররা ৩৮ ওভার বল করেছেন। অপরদিকে, নিউজিল্যান্ডের দুই স্পিনার ছিলেন – মিচেল স্যান্টনার এবং মাইকেল ব্রেসওয়েল। যদিও গ্লেন ফিলিপস ও রচিন রবীন্দ্রও ছিলেন, তবে তারা পুরোপুরি স্পিনার নন। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের চতুর্থ স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজা টেস্টে ৩০০-র বেশি উইকেট নিয়েছেন এবং ওডিআই-তে ২০০-র বেশি উইকেট রয়েছে তার। অন্যদিকে, নিউজিল্যান্ডের চতুর্থ স্পিনার ফিলিপস তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন উইকেটকিপার হিসেবে।”
ভারতের আধিপত্যের আলোচনা
নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড লিখেছে যে সবকিছু ভারতের পক্ষে ছিল এবং নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে, তা সত্ত্বেও নিউজিল্যান্ড দল এই পরাজয়কে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেছে।
নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার বলেছেন, ”আমি আমার দলের জন্য গর্বিত। এমন টুর্নামেন্টে সব সময় কিছু না কিছু চ্যালেঞ্জ থাকে এবং এখান থেকে নতুন কিছু শেখার সুযোগ পাওয়া যায়। আমি কোনো বিষয়ে অভিযোগ করতে চাই না। আমরা পুরো টুর্নামেন্টে প্রতিপক্ষ দলকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছি।”
রেডিও নিউজিল্যান্ড তার ওয়েবসাইটে লিখেছে, ”ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা, পাকিস্তানে স্বাগতিক দেশ হিসেবে অনীহা এবং গড়পড়তা ক্রিকেটের কারণে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি টুর্নামেন্ট আইসিসির পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়নি। ওডিআই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আইসিসির জন্য অর্থ সংগ্রহের একটি মাধ্যম হলেও, টি-টোয়েন্টির বিপুল জনপ্রিয়তার মধ্যে ওডিআই ক্রিকেটের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।”
বিবিসি
রেডিও নিউজিল্যান্ড লিখেছে, ”যেকোনো টুর্নামেন্টের সাফল্যের জন্য ভারত আর্থিকভাবে প্রধান চালিকা শক্তি। ১৯৯৬ সালের পর কোনো আইসিসি টুর্নামেন্ট পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হলে ভারতের অংশগ্রহণ নিয়ে সবসময় সংশয় তৈরি হয়।”
রেডিও নিউজিল্যান্ড আরও লিখেছে, ”ভারত পাকিস্তানে না খেলার সিদ্ধান্তে অনড় ছিল কারণ দুই দেশের রাজনৈতিক উত্তেজনা এখনও কমেনি। তারা কেবল আইসিসি টুর্নামেন্টে একে অপরের বিরুদ্ধে খেলে, তাও তৃতীয় কোনো দেশে।”
অ্যাওয়ার্ড-উইনিং ক্রিকেট লেখক নিকোলাস ব্রুকস বলেছেন, ”আমি ভারতীয় ক্রিকেটারদের জন্য দুঃখিত। আমার মতে, ভারতীয় দল অসাধারণ এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে এগিয়ে থাকার ক্ষমতা রাখে। এই টুর্নামেন্টে তাদের জয় দক্ষতার ভিত্তিতে হয়েছে, কিন্তু আলোচনায় উঠে আসছে তারা এক জায়গায় খেলার সুবিধা পেয়েছে।”
গেটি ইমেজেস
নিউজিল্যান্ড ২০০০ সালে নাইরোবিতে ভারতকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে চার উইকেটে হারিয়েছিল।
ভারতের প্রশংসা ও সমালোচনা একসঙ্গে
নিউজিল্যান্ডের নিউজ ওয়েবসাইট স্টাফ লিখেছে, ”ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের জয় আরও বড় হয়ে দাঁড়ায় কারণ জসপ্রীত বুমরাহ চোটের কারণে টুর্নামেন্টের বাইরে ছিলেন এবং বিরাট কোহলি দ্বিতীয় বলেই আউট হয়েছিলেন।”
স্টাফ লিখেছে, ”গত দুই বছরে ভারত তিনটি আইসিসি টুর্নামেন্টে ২৪টির মধ্যে ২৩টি ম্যাচ জিতেছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০২৩ ওডিআই বিশ্বকাপ, গত বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে বলা হচ্ছে যে যা সুবিধা স্বাগতিক দেশ পাওয়ার কথা ছিল, তা ভারত পেয়েছে। সাধারণত টুর্নামেন্টের আয়োজনকারী দেশ বাড়তি সুবিধা পায়। গত চারটি ওডিআই বিশ্বকাপের মধ্যে তিনটিতে স্বাগতিক দেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতকে স্বাগতিকের মতো সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যা বিরল ঘটনা।”
বিবিসি
স্টাফ লিখেছে, ”২০২১ সালে পাকিস্তানকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আয়োজক করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল এবং আইসিসি সমস্ত ১৫টি ম্যাচ পাকিস্তানে আয়োজনের পরিকল্পনা করেছিল। তখন ভারতকে অন্য কোনো দেশে ম্যাচ খেলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। ২০০৮ সালে মুম্বাই হামলার পর ভারতীয় দল পাকিস্তানে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। আইসিসি শুধুমাত্র ভারতের ম্যাচগুলো দুবাইতে রেখেছে, অন্য সাতটি দল পাকিস্তানে খেলেছে।”
”ফাইনালের আগে মোহাম্মদ শামি বলেছিলেন যে তারা দুবাইয়ের পিচ সম্পর্কে জানেন, তাই এটি তাদের জন্য সুবিধাজনক। নিউজিল্যান্ড তার ম্যাচ তিনটি পাকিস্তানের তিনটি শহরে খেলেছে, অথচ ভারত তার সব ম্যাচ দুবাইতেই খেলেছে।”
এএনআই
এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আয়োজক ছিল পাকিস্তান, কিন্তু ভারত সেখানে খেলার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল।
নিউজিল্যান্ডের নিউজ ওয়েবসাইট দ্য পোস্ট লিখেছে, ”২৫ বছর আগে নিউজিল্যান্ড কেনিয়ার নাইরোবিতে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল জিতেছিল। এরপর নিউজিল্যান্ড সাদা বলের ফাইনালে টানা পাঁচবার হেরেছে। ভারত যখন পাকিস্তানে না খেলার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন থেকেই নানা প্রশ্ন উঠতে থাকে। ভারতের দল ইতোমধ্যে শক্তিশালী ছিল, তদুপরি আরও কিছু বিষয় তাদের পক্ষে কাজ করেছে।”
ওয়েবসাইটটি লিখেছে, ”আইসিসি বাকি দলগুলোকে জানিয়েছিল যে হয় তারা পাকিস্তানের বাইরে খেলতে রাজি হবে, নয়তো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। ভারতের দল দুবাইতে শিবির গেঁড়েছিল এবং ঘরের মাঠের মতো সুবিধা পেয়েছিল। অন্যদিকে, নিউজিল্যান্ড দল পাকিস্তান থেকে দুবাইয়ে যাতায়াত করছিল।”
দ্য পোস্ট লিখেছে, ”ভারত যে সুবিধা পেয়েছে, তেমন সুবিধা সাধারণত কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে কোনো দল পায় না, যদিও ভারতের আধিপত্য সাদা বলের ক্রিকেটে সুপ্রতিষ্ঠিত।”