ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং মহেশ, এই তিন দেবতার মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ? মহর্ষি ভৃগু তোমাকে এভাবেই চিনতে পেরেছিলেন, পুরো ঘটনাটি জেনে নিন!

ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং মহেশ, এই তিন দেবতার মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ? মহর্ষি ভৃগু তোমাকে এভাবেই চিনতে পেরেছিলেন, পুরো ঘটনাটি জেনে নিন!

একবার সরস্বতী নদীর তীরে ঋষি-সন্তরা সমবেত হয়েছিলেন। তারা আলোচনা করছিল যে ত্রিদেব অর্থাৎ ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং মহেশের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ? এই বিষয়ে কোনও ঐক্যমত্য হতে পারেনি, তাই তারা একটি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এই কাজটি মহর্ষি ভৃগুকে দেওয়া হয়েছিল, যিনি ছিলেন ব্রহ্মাজির মানসিক পুত্র।

ব্রহ্মার পরীক্ষা

মহর্ষি ভৃগু প্রথমে ব্রহ্মলোকে পৌঁছান। সেখানে তিনি মাথা নত করেননি, প্রশংসাও করেননি। এটা দেখে ব্রহ্মাজি রেগে গেলেন। তার মুখ লাল হয়ে গেল, আর চোখে রাগের আগুন জ্বলে উঠল। কিন্তু ভৃগুকে তার নিজের ছেলে ভেবে সে শান্ত হলো। সে তার রাগ নিয়ন্ত্রণ করল। এই ঘটনার মাধ্যমে মহর্ষি ভৃগু তার উত্তর পেয়ে গিয়েছিলেন।

শিবের পরীক্ষা

এর পর ভৃগু জি কৈলাসে পৌঁছেন। ভগবান শিব তাকে দেখে খুশি হলেন এবং তাকে আলিঙ্গন করার জন্য এগিয়ে গেলেন। কিন্তু ভৃগু তার আলিঙ্গন প্রত্যাখ্যান করে বললেন, ‘মহাদেব!’ তোমরা ধর্মের সীমা লঙ্ঘন করছো এবং দুষ্টদের আশীর্বাদ দিয়ে পৃথিবীকে সমস্যায় ফেলছো। এই কারণেই আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরতে পারছি না।

এই কথা শুনে ভগবান শিব ক্রুদ্ধ হলেন। তিনি ত্রিশূল তুলে নিয়ে ভৃগুকে হত্যা করতে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই মা সতী কোনওভাবে তার রাগ শান্ত করলেন।

ভগবান বিষ্ণুর পরীক্ষা

এর পর মহর্ষি ভৃগু বৈকুণ্ঠে পৌঁছান। সেখানে ভগবান বিষ্ণু মা লক্ষ্মীর কোলে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। ভৃগুজি সরাসরি তার বুকে লাথি মারলেন। ভগবান বিষ্ণু তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়ালেন। তিনি রাগ করেননি, অভিযোগও করেননি।

বরং, তিনি হাত জোড় করে বললেন, ‘মহর্ষি!’ তোমার পায়ে কি ব্যথা হয়েছে? দুঃখিত, আমি তোমাকে আসতে দেখতে পাইনি, তাই তোমাকে স্বাগত জানাতে পারিনি। তোমার পায়ের স্পর্শ পবিত্র করে। এই বলে সে তার পা মালিশ করতে লাগল।

ভগবান বিষ্ণুর এই বিনয়ী ও প্রেমময় আচরণ ভৃগু মুনির চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল। তিনি ঋষিদের কাছে ফিরে এসে তার অগ্নিপরীক্ষার সম্পূর্ণ বিবরণ বর্ণনা করলেন। সমস্ত ঋষি ও সাধু বুঝতে পেরেছিলেন যে ভগবান বিষ্ণু হলেন শ্রেষ্ঠ কারণ তাঁর ক্ষমা, ধৈর্য এবং করুণা সবচেয়ে বেশি। সেই থেকে তিনি ভগবান বিষ্ণুর পূজা শুরু করেন। প্রকৃতপক্ষে, ঋষিরা এই পরীক্ষাটি পরিচালনা করেছিলেন শুধুমাত্র মানুষের সন্দেহ দূর করার জন্য, যাতে তারা সঠিক পথ চিনতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *