পাকিস্তানে যে ট্রেন হাইজ্যাক করা হয়েছে, তাতে কোন ভিআইপি ছিলেন? উঠে এলো অপহরণের আসল কারণ, ফাঁস হলো সমস্ত ভেতরের তথ্য

বলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) পাকিস্তানে একটি ট্রেন হাইজ্যাক করেছে। ১০০ জনকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে। হামলাকারীরা ট্রেনের চালককে গুলি করেছে, যার ফলে তিনি আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

পাকিস্তানের টিভি চ্যানেলগুলোর রিপোর্ট অনুযায়ী, দক্ষিণ-পশ্চিম পাকিস্তানে কিছু হামলাকারী একটি যাত্রীবাহী ট্রেনে গুলি চালিয়েছে, এতে অনেকেই আহত হয়েছেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক, আসলে বিএলএ কী এবং কেন তারা ট্রেনটি হাইজ্যাক করেছে।

কোয়েটা থেকে পেশোয়ার যাচ্ছিল জাফর এক্সপ্রেস

এই ট্রেনটি জাফর এক্সপ্রেস, যা দক্ষিণ-পশ্চিম বলুচিস্তানের কোয়েটা থেকে খাইবার পাখতুনখোয়ার পেশোয়ার যাচ্ছিল, তখনই এটি হামলার শিকার হয়। প্রাদেশিক সরকার স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে জরুরি ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে। কোয়েটার সিভিল হাসপাতালে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।

এক বিবৃতিতে উগ্রপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন বলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) হামলার দায় স্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে যে তারা ট্রেন থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ যাত্রীদের জিম্মি করেছে। বিএলএ দাবি করেছে, তারা ১০০-র বেশি মানুষকে জিম্মি করেছে এবং তাদের অভিযানে ৬ জন নিরাপত্তা সদস্য নিহত হয়েছে। সংগঠনটি আরও জানিয়েছে, জিম্মিদের মধ্যে নিরাপত্তা কর্মকর্তারাও রয়েছেন।

হামলাকারীরা রেললাইন উড়িয়ে দিয়েছে

হামলাকারীরা রেললাইনও উড়িয়ে দিয়েছে। তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যদি সেনাবাহিনী কোনো অভিযান শুরু করে, তাহলে জিম্মিদের হত্যা করা হবে। জিম্মিদের মধ্যে পাকিস্তানি সেনা, পুলিশ এবং আইএসআই-এর লোকজনও রয়েছে। বিএলএ জানিয়েছে, তারা মহিলাদের ও শিশুদের মুক্তি দিয়েছে।

বলুচ লিবারেশন আর্মির দাবি, তাদের হেফাজতে ১০০-র বেশি যাত্রী ও নিরাপত্তা কর্মী রয়েছেন, যাদের মধ্যে আইএসআই ও পাকিস্তান এটিএসের সদস্যরাও আছেন। এই লোকেরা ছুটিতে পাঞ্জাব যাচ্ছিলেন।

ট্রেনটি একটি সুড়ঙ্গে থামানো হয়েছে

বন্দুকধারীরা ট্রেনটিকে একটি সুড়ঙ্গে থামিয়ে রেখেছে। প্রাথমিক গুলিবর্ষণে কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। সংবাদ সংস্থা এপি জানিয়েছে, এই হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছে।

বিএলএ বলেছে, পাকিস্তান সরকার বলুচিস্তানের সম্পদকে পাকিস্তানের উন্নয়নে ব্যবহার করছে, কিন্তু বলুচিস্তানে কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না। তবে, প্রাদেশিক সরকার বা রেলওয়ে কর্মকর্তারা এখনো কোনো জিম্মির বিষয়ে নিশ্চিত কিছু বলেননি।

রেলওয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বলুচিস্তানের বোলান জেলার মুশকাফ এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে।

৫০০ যাত্রী ছিলেন ট্রেনে

বলুচিস্তান সরকারের মুখপাত্র শাহিদ রিন্দ এক বিবৃতিতে বলেছেন, “কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেসে পাহারো কুনরি ও গাদলারের মধ্যে প্রচণ্ড গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।”

এদিকে, রেলওয়ে কন্ট্রোলার মোহাম্মদ কাশিফ জানিয়েছেন, ৯টি বগি বিশিষ্ট ট্রেনটিতে প্রায় ৫০০ যাত্রী ছিলেন। কন্ট্রোলারের মতে, “সশস্ত্র হামলাকারীরা ট্রেনটিকে সুড়ঙ্গ নম্বর ৮-এ থামিয়ে দিয়েছে। যাত্রীদের এবং রেলকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা চলছে।”

সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সিবি হাসপাতালে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে, এবং অ্যাম্বুলেন্স ও নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। তবে দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ার কারণে কর্মকর্তাদের সেখানে পৌঁছাতে সমস্যা হচ্ছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “রেলওয়ে বিভাগ উদ্ধার অভিযানের জন্য অতিরিক্ত ট্রেন পাঠিয়েছে। হামলার তীব্রতা এবং সন্ত্রাসী উপাদানের উপস্থিতি যাচাই করা হচ্ছে। বলুচিস্তান সরকার জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে এবং সব সংস্থাকে সতর্ক থাকতে বলেছে।”

সিভিল হাসপাতালে জরুরি অবস্থা ঘোষণা

এক কর্মকর্তা জনগণকে শান্ত থাকার এবং গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের মুখপাত্র ড. ওয়াসিম বেগ জানিয়েছেন, কোয়েটার সিভিল হাসপাতালেও জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।

বেগ বলেছেন, “সমস্ত পরামর্শদাতা, চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট, নার্স এবং প্যারামেডিক্যাল কর্মীদের হাসপাতালে ডাকা হয়েছে।”

পাকিস্তান রেলওয়ে দেড় মাসেরও বেশি সময় স্থগিত থাকার পর ১ অক্টোবর কোয়েটা-পেশোয়ার ট্রেন পরিষেবা পুনরায় চালু করার ঘোষণা করেছিল।

২৬ জন নিহত, ৬২ জন আহত

গত এক বছরে বলুচিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

নভেম্বর ২০২৪-এ কোয়েটা রেলস্টেশনে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে কমপক্ষে ২৬ জন নিহত এবং ৬২ জন আহত হয়েছিলেন।

গত সপ্তাহে, প্রাদেশিক সরকার বলুচিস্তানে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলা ও অন্যান্য সহিংস ঘটনাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছে এবং মোকাবিলার জন্য বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

O

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *