‘স্টুপিড প্রেসিডেন্ট, গেট আউট…’, ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কিকে অপমান করলেন, বিশ্ব তাকিয়ে রইল
সাম্প্রতিক সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন থেকে পুনরায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন, তখন থেকেই একের পর এক অস্বাভাবিক ঘটনা দেখা যাচ্ছে। সেটা হোক পারস্পরিক কর (reciprocal tax) নিয়ে হুমকি, বা অন্য কোনো দেশের প্রেসিডেন্টকে হোয়াইট হাউসে ডেকে প্রকাশ্যে অপমান করার বিষয়।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, ক্রমাগত ট্রাম্পের সমালোচনা সত্ত্বেও তিনি এসব বিষয়কে একেবারেই গুরুত্ব না দিয়ে এমন কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছেন যা একজন প্রেসিডেন্টের মর্যাদাকে ছোট করে দেয়।
সম্প্রতি, অবৈধভাবে আমেরিকায় বসবাসরত ভারতীয়দের হাতকড়া পরিয়ে সামরিক বিমানে করে ফেরত পাঠানোর ঘটনাও নিন্দনীয়। তাই প্রশ্ন উঠছে, যে দেশ নিজেকে সুপার পাওয়ার বলে দাবি করে, সে যদি তার মিত্র দেশের সঙ্গে এমন আচরণ করে, তবে সেটাকে কী বলা যাবে?
আসুন, আবার ফিরে যাই ট্রাম্প-জেলেনস্কি বিতর্কে এবং দেখি কীভাবে বিশ্ব এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে হোয়াইট হাউসে যা ঘটেছে, তা ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঘটেছে। Oval Office-এ এক উচ্চ-স্তরের বৈঠকের সময়, ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে এতটাই উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় যে ট্রাম্প জেলেনস্কিকে অপমান করে বের করে দেন। এই ঘটনা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং বিশ্বজুড়ে প্রবল প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
হোয়াইট হাউসে ঠিক কী ঘটেছিল?
জেলেনস্কি ও ট্রাম্পের এই বৈঠক ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং খনিজ সম্পদ নিয়ে চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করতে আয়োজিত হয়েছিল। কিন্তু বৈঠকের সময়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জেলেনস্কির ওপর চাপ সৃষ্টি করেন যাতে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসেন। যখন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন যে তিনি ইউক্রেনের স্বার্থের বিরুদ্ধে কোনো চুক্তি করবেন না, তখন ট্রাম্প রেগে যান। রিপোর্ট অনুযায়ী, ট্রাম্প জেলেনস্কিকে “স্টুপিড প্রেসিডেন্ট” বলেন এবং রাগের মাথায় Oval Office থেকে “গেট আউট” বলে বের করে দেন।
বিশ্বের প্রতিক্রিয়া: কে জেলেনস্কির পক্ষে, কে ট্রাম্পের?
এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার পর এবং ট্রাম্পের অপমানজনক আচরণের পর বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ জেলেনস্কির পক্ষে কথা বলেছে, যখন রাশিয়া ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে।
জেলেনস্কির পক্ষে দাঁড়ানো দেশসমূহ:
- অস্ট্রিয়া: চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার বলেছেন, “ইউক্রেন তিন বছর ধরে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। আমাদের এই সংঘর্ষের ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী সমাধান দরকার, তবে রাশিয়াই আক্রমণকারী।”
- কানাডা: প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, “ইউক্রেন গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের জন্য লড়াই করছে। আমরা সবসময় ইউক্রেনের পাশে থাকব।”
- স্লোভেনিয়া: প্রেসিডেন্ট নাতাশা পিরক মুসার বলেছেন, “আজ হোয়াইট হাউসে যা ঘটেছে, তা আন্তর্জাতিক আইন ও কূটনীতির মৌলিক নীতিগুলোর পরিপন্থী।”
- জার্মানি: চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ বলেছেন, “এই যুদ্ধ শেষ করতে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী যদি কেউ থাকে, তবে তা ইউক্রেনই।”
- ফ্রান্স: প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, “রাশিয়া আক্রমণকারী এবং ইউক্রেন ভুক্তভোগী। আমাদের এই সত্যটি কখনো ভুলে যাওয়া উচিত নয়।”
- ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU): ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েন এবং ইউরোপিয়ান কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা বলেছেন, “আমরা ইউক্রেনের জনগণের সাহসিকতাকে সম্মান জানাই।”
- পোল্যান্ড, ইতালি, ফিনল্যান্ড, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, স্পেন সহ বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ জেলেনস্কির সমর্থনে এগিয়ে এসেছে।
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া:
রাশিয়ার সরকার ও গণমাধ্যম প্রকাশ্যে জেলেনস্কির অপমান নিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছে। রাশিয়ার সরকারি মুখপাত্র জেলেনস্কিকে “scumbag” (নীচ ব্যক্তি) বলেছেন এবং বলেছেন, “তিনি যা প্রাপ্য ছিলেন, তাই পেয়েছেন।” রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ট্রাম্পের প্রশংসা করে বলেছেন, “অন্তত ট্রাম্পের মধ্যে এতটা সাহস আছে যে তিনি তার অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে পারেন।”
ট্রাম্পের অবস্থান – আপস নাকি হুমকি?
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রেস কনফারেন্সে বলেছেন যে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত শেষ করতে চান, তবে তিনি মনে করেন জেলেনস্কি এই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন। ট্রাম্প বলেছেন, “ইউক্রেনকে এখন বুঝতে হবে যে আমেরিকা তাদের চিরকাল সাহায্য করবে না। তাদের শান্তির পথে এগোতে হবে, তা যত কঠিনই হোক না কেন।” ট্রাম্পের এই বক্তব্য আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতির বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। বাইডেন প্রশাসন যেখানে ইউক্রেনকে সম্পূর্ণ সহায়তা করছিল, সেখানে ট্রাম্পের কৌশল সম্পূর্ণ ভিন্ন।
এই ঘটনার প্রভাব:
- ইউক্রেনের ওপর চাপ বাড়বে – আমেরিকার এই নতুন অবস্থানের কারণে জেলেনস্কিকে আন্তর্জাতিক স্তরে আরও বেশি লড়াই করতে হতে পারে।
- রাশিয়া লাভবান হতে পারে – যদি আমেরিকা ইউক্রেনের সামরিক ও আর্থিক সহায়তা কমিয়ে দেয়, তবে রাশিয়ার শক্তি বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হতে পারে।
- ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূমিকা বাড়তে পারে – এখন ইউরোপকে ইউক্রেনের সহায়তায় আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে, কারণ আমেরিকা আগের মতো সমর্থন নাও দিতে পারে।
- ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির ওপর প্রশ্ন উঠবে – তার এই আচরণের ফলে বিশ্ববাসীর কাছে বার্তা যেতে পারে যে আমেরিকা তার মিত্রদের সঙ্গেও কঠোরভাবে আচরণ করতে পারে।