ভারতের মানচিত্রে শ্রীলঙ্কা থাকার রহস্য

ভারতের মানচিত্রে শ্রীলঙ্কাকে দেখানো হয়—এই বিষয়টি অনেকের কাছেই অজানা। যদিও শ্রীলঙ্কা একটি স্বাধীন দেশ এবং ভারতের তার উপর কোনও কর্তৃত্ব নেই, তবুও দশকের পর দশক ধরে ভারতের মানচিত্রে শ্রীলঙ্কাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর পেছনে রয়েছে সমুদ্র আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম, যা অনেক শিক্ষিত মানুষও জানেন না।
জাতিসংঘের সমুদ্র আইন (Law of the Sea) অনুযায়ী, কোনো দেশের সমুদ্রসীমা ২০০ নটিক্যাল মাইল (প্রায় ৩৭০ কিলোমিটার) পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। এই সীমার মধ্যে থাকা দ্বীপ ও অন্যান্য স্থাপনাগুলো সংশ্লিষ্ট দেশের মানচিত্রে দেখানো বাধ্যতামূলক। ভারতের দক্ষিণতম প্রান্ত তামিলনাড়ুর ধনুষ্কোড়ি থেকে শ্রীলঙ্কার দূরত্ব মাত্র ১৮ কিলোমিটার। এই অল্প দূরত্বের কারণে, সমুদ্র আইনের নিয়ম অনুসারে ভারতের মানচিত্রে শ্রীলঙ্কাকে দেখানো আবশ্যক। যদি শ্রীলঙ্কাকে মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত না করা হয়, তাহলে তা সমুদ্র আইনের লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হবে।
১৯৫৬ সালে জাতিসংঘ সমুদ্র আইন সংক্রান্ত প্রথম প্রস্তাব গ্রহণ করে এবং ১৯৭৩ থেকে ১৯৮২ সালের মধ্যে তৃতীয় সম্মেলনে এই আইন চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়। এই আইনের অধীনে, প্রতিটি দেশ তার সমুদ্রসীমার মধ্যে থাকা সমস্ত ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য মানচিত্রে দেখাতে বাধ্য। একইভাবে, শ্রীলঙ্কার মানচিত্রেও ভারতের কিছু অংশ দেখানো হয়। এই নিয়ম শুধু ভারত ও শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়, বরং বিশ্বের অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও প্রাসঙ্গিক।
এই ব্যাখ্যা থেকে স্পষ্ট যে, ভারতের মানচিত্রে শ্রীলঙ্কাকে দেখানোর পেছনে কোনো রাজনৈতিক বা ভৌগোলিক দাবি নয়, বরং আন্তর্জাতিক আইনের একটি বাধ্যবাধকতা কাজ করে। এই তথ্য জানার পর অনেকেই চমকে যান, কারণ এটি সাধারণভাবে আলোচিত বিষয় নয়।