মুম্বই, ৩০ মার্চ ২০২৫: আগামী ১ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া নতুন আর্থিক বছর ২০২৫-২৬ নিয়ে ভারতীয় অর্থনীতির জন্য সুখবর নিয়ে এল আর্থিক উপদেষ্টা সংস্থা ইওয়াই। তাদের সর্বশেষ রিপোর্টে বলা হয়েছে, আগামী আর্থিক বছরে ভারতের প্রকৃত জিডিপি (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট) বৃদ্ধির হার ৬.৫ শতাংশে পৌঁছতে পারে। শুধু তাই নয়, দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ইতিবাচক সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

ইওয়াই-এর মার্চ মাসের ‘ইকনমিক ওয়াচ’ রিপোর্টে চলতি আর্থিক বছর (২০২৪-২৫) এবং আগামী বছরের অর্থনৈতিক প্রবণতা নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত চলতি আর্থিক বছরে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার ৬.৪ শতাংশ হতে পারে। তবে আগামী বছরে এই হার আরও সামান্য বেড়ে ৬.৫ শতাংশে পৌঁছবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। উল্লেখযোগ্যভাবে, গত মাসে কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তর (এনএসও) প্রকাশিত রিপোর্টেও ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরের জন্য ৬.৫ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। এই দুই পূর্বাভাসের মধ্যে সামঞ্জস্য অর্থনীতির প্রতি আস্থা আরও জোরদার করছে।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদ

ইওয়াই-এর রিপোর্টে শুধু অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার নিয়ে আলোচনাই সীমাবদ্ধ থাকেনি। দেশের সামাজিক উন্নয়নের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সরকারি বরাদ্দ বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটির বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী দুই দশকের মধ্যে এই দুই খাতে বিনিয়োগ উন্নত দেশগুলির সমতুল্য স্তরে নিয়ে যাওয়া উচিত। বর্তমানে ভারতের শিক্ষা খাতে সরকারি ব্যয় জিডিপির মাত্র ৪.৬ শতাংশ। এই হার ধীরে ধীরে ৬.৫ শতাংশে উন্নীত করার পরামর্শ দিয়েছে ইওয়াই।

“ভারতের নতুন প্রজন্মের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এবং ক্রমবর্ধমান কর্মশক্তির চাহিদা মেটাতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ অত্যন্ত জরুরি,” বলে মন্তব্য করেছেন ইওয়াই-এর একজন শীর্ষ বিশ্লেষক। তিনি আরও যোগ করেন, “এই দুই খাতে সঠিক বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির ভিতকে আরও মজবুত করবে।”

কী কারণে এই আশাবাদ?

ইওয়াই-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির পেছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কাজ করছে। প্রথমত, দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হয়েছে। দ্বিতীয়ত, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া, বিশ্ব বাজারে ভারতীয় পণ্যের চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি রপ্তানি খাতও গতি পেয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তা এবং জ্বালানি মূল্যের ওঠানামা এই পূর্বাভাসের পথে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

পাঠকের জন্য কী বার্তা?

ভারতের অর্থনীতি যে স্থিতিশীল গতিতে এগোচ্ছে, তা ইওয়াই-এর রিপোর্টে স্পষ্ট। তবে শুধু জিডিপি বৃদ্ধির সংখ্যার পেছনে না ছুটে সামাজিক উন্নয়নের দিকেও নজর দেওয়া জরুরি। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ বাড়লে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে, যা শেষ পর্যন্ত অর্থনীতির চাকাকে আরও গতিশীল করবে। আগামী দিনে সরকার এই পরামর্শ কতটা কার্যকর করতে পারে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।