যমুনা এক্সপ্রেসওয়ে এখন নিরাপদ: আইআইটি দিল্লির পরামর্শে YIDA-র বড় পদক্ষেপ

গ্রেটার নয়ডা থেকে আগ্রা পর্যন্ত বিস্তৃত যমুনা এক্সপ্রেসওয়ে আর দুর্ঘটনার কবলে পড়বে না—এমনটাই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যমুনা এক্সপ্রেসওয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (YEIDA)। উত্তর প্রদেশের উন্নয়নের অন্যতম প্রধান মহাসড়ক হিসেবে পরিচিত এই এক্সপ্রেসওয়েকে নিরাপদ ও দক্ষ করতে YIDA বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। দিল্লি আইআইটির পরামর্শের ভিত্তিতে এই উন্নতি শুধু দুর্ঘটনা কমাবে না, বরং কোনো দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটলেও তাৎক্ষণিক সাহায্যের ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। কীভাবে এই পরিবর্তন এল, আসুন বিস্তারিত জানা যাক।
আইআইটি দিল্লির ২১ দফা পরামর্শ: নিরাপত্তার নতুন মান
২০১৮ সালের আগস্টে YIDA যমুনা এক্সপ্রেসওয়ের নিরাপত্তা অডিটের দায়িত্ব দেয় আইআইটি দিল্লির হাতে। গৌতম বুদ্ধ নগর, আলিগড়, মথুরা, হাথরাস, আগ্রা ও বুলন্দশহর—এই ছয় জেলার মধ্য দিয়ে যাওয়া এই মহাসড়কের প্রতিটি কিলোমিটার জরিপ করে ২০১৯ সালে আইআইটি একটি বিশদ প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে ২১টি নিরাপত্তা পরামর্শ ছিল, যা রাজ্য সড়ক নিরাপত্তা পরিষদের বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
YIDA জানিয়েছে, আইআইটি কানপুরের সহযোগিতায় তারা এই সমস্ত পরামর্শ বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে—এক্সিট র্যাম্পের আগে স্পষ্ট সাইনবোর্ড স্থাপন, লেন সিস্টেমের অপ্রয়োজনীয় জটিলতা দূরীকরণ, প্রবেশ-প্রস্থানে রাম্বল স্ট্রিপ বসানো, শব্দ কমাতে ও দুর্ঘটনার তীব্রতা হ্রাসে ক্র্যাশ অ্যাটেনুয়েটর ইনস্টলেশন, পুরো রাস্তায় শ্রবণযোগ্য শোল্ডার চিহ্নিতকরণ, সাইনপোস্ট শোল্ডার থেকে সরিয়ে স্ট্যান্ডার্ড গার্ড রেল পুনঃস্থাপন এবং ডিভাইডারের পরিবর্তে ফ্লাশ মিডিয়ান ও সেন্ট্রাল গার্ড রেল ব্যবহার। এই পরিবর্তনগুলো চালকদের জন্য রাস্তাকে আরও নিরাপদ ও স্বচ্ছ করে তুলেছে।
জরুরি পরিষেবায় ‘যমুনা সাথী’ অ্যাপ
নিরাপত্তার পাশাপাশি জরুরি পরিষেবাকেও অগ্রাধিকার দিয়েছে YIDA। রাজ্য সড়ক নিরাপত্তা পরিষদ জানিয়েছে, এক্সপ্রেসওয়েতে এখন ৩টি কুইক রেসপন্স টিম (QRT) গাড়ি, ১১টি টহল গাড়ি, ৬টি অ্যাম্বুলেন্স, ৫টি ফায়ার ইঞ্জিন, ৯টি ক্রেন এবং ২টি জেসিবি মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া, গুরুতর দুর্ঘটনার জন্য তিনটি ট্রমা সেন্টারও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
চালকদের সুবিধার জন্য চালু হয়েছে ‘যমুনা সাথী’ অ্যাপ ও টোল-ফ্রি নম্বর। YIDA-র এক কর্মকর্তা বলেন, “এই অ্যাপের মাধ্যমে যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক সাহায্য পাওয়া যাবে। দুর্ঘটনার পর প্রথম এক ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আর আমরা সেই সময়ের মধ্যে সব রকম সহায়তা নিশ্চিত করছি।” এছাড়া, নিরাপত্তা জোরদারে শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা, হেলমেট ও সিট বেল্ট পরার নিয়ম কঠোরভাবে পালন এবং অতিরিক্ত গতির জন্য ই-চালানের ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
কেন এত দুর্ঘটনা হতো?
১৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যমুনা এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনের পর থেকেই দুর্ঘটনার জন্য কুখ্যাত ছিল। ২০১২ সালে চালু হওয়ার পর থেকে এখানে শতাধিক প্রাণহানি ঘটেছে। অপর্যাপ্ত সাইনেজ, অস্পষ্ট লেন বিন্যাস এবং দ্রুতগতির গাড়ির জন্য অপ্রতুল নিরাপত্তা ব্যবস্থা এর প্রধান কারণ ছিল। আইআইটি দিল্লির প্রতিবেদনে এই ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে সংশোধনের পরামর্শ দেওয়া হয়। সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ড. রোহিত সিং বলেন, “এক্সিট র্যাম্পে দিকনির্দেশনার অভাব এবং শোল্ডারে বাধার কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছিল। এখন এই সমস্যাগুলো মোটামুটি সমাধান হয়েছে।”
YIDA-র দাবি: শূন্য দুর্ঘটনার লক্ষ্য
YIDA-র সিইও অরুণ ভীর সিং জানান, “আইআইটি দিল্লির ২১টি পরামর্শের মধ্যে ৮টি বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল, যা আমরা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেছি। আমাদের লক্ষ্য এখন শূন্য দুর্ঘটনা।” তিনি আরও বলেন, “চালকদের সচেতনতা ও জরুরি পরিষেবার দ্রুত প্রতিক্রিয়া এই লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করবে।” স্থানীয় বাসিন্দা রমেশ যাদব বলেন, “আগে রাতে এই রাস্তায় গাড়ি চালাতে ভয় লাগত। এখন সাইনবোর্ড ও টহল গাড়ি দেখে নিশ্চিন্ত লাগে।”
শেষ কথা
যমুনা এক্সপ্রেসওয়ে এখন শুধু উন্নয়নের মহাসড়ক নয়, নিরাপত্তারও প্রতীক হয়ে উঠেছে। আইআইটি দিল্লির পরামর্শে YIDA-র এই উদ্যোগ দুর্ঘটনার সংখ্যা কমিয়ে চালকদের জন্য আস্থার পরিবেশ তৈরি করেছে। ‘যমুনা সাথী’ অ্যাপ ও জরুরি পরিষেবার সংযোজন এই প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করেছে। উত্তর প্রদেশের এই গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এখন সত্যিই নিরাপদ যাত্রার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।