ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি: ভারতের তেল আমদানিতে বড় ধাক্কা?

নয়াদিল্লি, ১ এপ্রিল ২০২৫: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ান তেল ক্রেতাদের উপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে বিশ্ব তেল বাজারে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছেন। এই ঘোষণা ভারতের জন্য বিশেষভাবে উদ্বেগজনক, যেখানে রাশিয়া বর্তমানে শীর্ষ তেল সরবরাহকারী হিসেবে আধিপত্য বিস্তার করছে। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ভারতের জ্বালানি খাত এবং অর্থনীতির উপর গভীর প্রভাব পড়তে পারে।
ট্রাম্পের সতর্কবার্তা: রাশিয়ার উপর চাপ, ভারতের উপর ঝুঁকি
রবিবার এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, “যদি রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আমার প্রচেষ্টায় বাধা দেয়, তাহলে রাশিয়ান তেল ক্রেতাদের উপর ২৫-৫০% শুল্ক আরোপ করা হবে।” তিনি আরও স্পষ্ট করে বলেন, “আপনি রাশিয়া থেকে তেল কিনলে আমেরিকায় ব্যবসা করতে পারবেন না।” এই হুমকি এমন সময়ে এসেছে যখন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শান্তি আলোচনার গতি নিয়ে ট্রাম্পের হতাশা প্রকাশ পাচ্ছে।
২ এপ্রিল থেকে ভারতসহ বিশ্বের সব দেশের জন্য পারস্পরিক শুল্ক নীতি কার্যকর করার ঘোষণাও দিয়েছেন ট্রাম্প। এর অর্থ, আমেরিকান পণ্যের উপর কোনো দেশ যে শুল্ক আরোপ করবে, সেই একই হারে আমেরিকাও প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করবে। “এই নীতি সব দেশের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য,” বলে জানিয়েছেন তিনি, যা ভারতের জন্য কোনো ছাড়ের সম্ভাবনা কমিয়ে দিয়েছে।
ভারতের রাশিয়ান তেল নির্ভরতা: সংখ্যায় চিত্র
রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানি গত কয়েক মাসে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। পণ্য বাজার বিশ্লেষণ সংস্থা কেপলারের তথ্য অনুযায়ী, মার্চের প্রথম ২১ দিনে ভারত প্রতিদিন গড়ে ১৮.৫ লক্ষ ব্যারেল রাশিয়ান তেল আমদানি করেছে। এটি ফেব্রুয়ারির ১৪.৭ লক্ষ এবং জানুয়ারির ১৬.৪ লক্ষ ব্যারেলের তুলনায় অনেক বেশি। তুলনামূলক কম দামে রাশিয়ান তেল ভারতের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
তবে, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকি এই সুবিধাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। ভারতীয় পরিশোধকদের একটি সূত্র জানিয়েছে, “এই শুল্ক কীভাবে কার্যকর হবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। এটি কেবল তেলের উপর শুল্ক হবে, নাকি ক্রেতাদের উপরও সেকেন্ডারি নিষেধাজ্ঞা আসবে, সে বিষয়ে আমাদের আরও তথ্য দরকার।”
ভারতের জন্য সম্ভাব্য প্রভাব
রাশিয়ান তেলের উপর শুল্ক আরোপ করা হলে এর দাম বাড়বে, যা ভারতের আমদানি ব্যয় বাড়িয়ে দেবে। এটি দেশের জ্বালানি মূল্য এবং মুদ্রাস্ফীতির উপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। তেল খাতের একজন বিশ্লেষক বলেন, “ভারতীয় শোধনাগারগুলো রাশিয়ার তেলের উপর নির্ভরশীল। শুল্ক আরোপ হলে তারা হয় এই বাড়তি খরচ গ্রাহকদের উপর চাপিয়ে দেবে, নয়তো বিকল্প সরবরাহকারীদের দিকে ঝুঁকবে।”
ইতিমধ্যে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ভারত ইরান ও ভেনেজুয়েলা থেকে তেল আমদানি কমিয়েছে। বর্তমানে ভেনেজুয়েলা থেকে সীমিত পরিমাণে তেল কেনা হলেও, রাশিয়ার মতো বড় সরবরাহকারী হারানোর ধাক্কা সামলানো কঠিন হবে। এমন পরিস্থিতিতে ভারত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো—যেমন ইরাক, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের দিকে ফিরতে পারে। তবে এই সরবরাহকারীদের তেল সাধারণত বেশি দামে আসে, যা ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি বাড়াতে পারে।
বিশ্ববাজারে প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
ট্রাম্পের হুমকির পর সোমবার তেলের দামে সামান্য পতন দেখা গেলেও, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এটি দীর্ঘমেয়াদে সরবরাহ ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ইউবিএস-এর বিশ্লেষক জিওভান্নি স্ট্যানোভো বলেন, “ট্রাম্পের এই সতর্কতা তেল বাজারে অনিশ্চয়তা বাড়িয়েছে। তবে তিনি এখনই শুল্ক আরোপ করবেন না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা বাজারের জন্য স্বস্তির বিষয়।”
তেলের দাম যদি বাড়ে, তবে ভারতের মতো তেল আমদানিকারক দেশগুলোর জন্য এটি একটি দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। একদিকে, জ্বালানি খরচ বাড়বে; অন্যদিকে, আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দিতে পারে।
ভারতের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে?
ভারত সরকার এখনও এই হুমকির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে, শিল্প সূত্রের মতে, পরিশোধকরা ইতিমধ্যে বিকল্প পরিকল্পনা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। একজন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থাকা তেল কিনব না। রাশিয়ার তেলে সমস্যা হলে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি বাড়ানো ছাড়া উপায় থাকবে না।”