নয়াদিল্লি, ২ এপ্রিল ২০২৫: একসময় বিদেশি অস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল ভারত আজ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বিশ্ব বাজারে ঝড় তুলেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত ২৩,৬২২ কোটি টাকার প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানি করে নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে। প্রায় ৮০টি দেশ এখন ভারতীয় গোলাবারুদ ও অস্ত্রের গুণমানের ওপর ভরসা করছে।

রেকর্ড গড়া রপ্তানি: কতটা এগিয়েছে ভারত?

প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি গত বছরের ২১,০৮৩ কোটি টাকার তুলনায় ১২.০৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২৩,৬২২ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এই অর্জন এক দশক আগের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করলে অবাক করার মতো। ২০১৩-১৪ সালে ভারত মাত্র ৬৮৬ কোটি টাকার প্রতিরক্ষা সামগ্রী রপ্তানি করেছিল। অর্থাৎ, গত দশকে রপ্তানি প্রায় ৩৪ গুণ বেড়েছে। তবে, এবারের প্রবৃদ্ধি গত বছরের ৩২.৪ শতাংশের তুলনায় কিছুটা কম, যখন রপ্তানি ১৫,৯২০ কোটি থেকে ২১,০৮৩ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছিল।

কারা ভারতের অস্ত্র কিনছে?

এই বছর ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের শীর্ষ ক্রেতা হিসেবে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং আর্মেনিয়া। এই তালিকায় শুধু উন্নত দেশই নয়, ভারতের প্রতিবেশী এবং কৌশলগত মিত্র দেশগুলোও রয়েছে। মোট ৮০টি দেশে ভারতীয় অস্ত্র পৌঁছেছে, যার মধ্যে গোলাবারুদ, আর্টিলারি গান, মিসাইল সিস্টেম এবং হালকা যুদ্ধবিমান উল্লেখযোগ্য।

সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়ে সাফল্য

এই রপ্তানির পিছনে বড় ভূমিকা রেখেছে প্রতিরক্ষা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো (DPSU)। চলতি অর্থবছরে DPSU-গুলো ৮,৩৮৯ কোটি টাকার রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের তুলনায় ৪২.৮৫ শতাংশ বৃদ্ধি। অন্যদিকে, বেসরকারি খাতও পিছিয়ে নেই। তারা ১৫,২৩৩ কোটি টাকার সরঞ্জাম রপ্তানি করেছে। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অমিতাভ সিনহা বলেন, “DPSU-গুলোর প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর উদ্ভাবনী ক্ষমতা একত্রে ভারতকে বিশ্ব বাজারে শক্তিশালী অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে।”

লক্ষ্যমাত্রা ও চ্যালেঞ্জ

সরকার এই বছর ৩০,০০০ কোটি টাকার রপ্তানি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল, কিন্তু ২১.২৬ শতাংশ পিছিয়ে পড়েছে। তবে, ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। ২০২৯ সালের মধ্যে ৫০,০০০ কোটি টাকার রপ্তানির লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারত স্বনির্ভরতার পথে দ্রুত এগোচ্ছে। আমাদের অস্ত্র এখন বিশ্বে গুণমানের প্রতীক।”

নীতিগত সংস্কারের ফল

এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে সরকারের নীতিগত উদ্যোগ। শিল্প লাইসেন্সিং সহজ করা, রপ্তানি প্রক্রিয়া সরলীকরণ এবং বিদেশি বিনিয়োগের দ্বার খোলার মতো পদক্ষেপ প্রতিরক্ষা শিল্পকে নতুন গতি দিয়েছে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের ফলে দেশীয় উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা রপ্তানির পথ প্রশস্ত করেছে।

বিশ্লেষণ: কেন এই অগ্রগতি গুরুত্বপূর্ণ?

এক দশক আগেও ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেটের বড় অংশ বিদেশি অস্ত্র কেনার জন্য ব্যয় হতো। আজ সেই চিত্র বদলে গেছে। দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত অস্ত্র বিশ্বে পৌঁছে যাওয়ায় ভারতের অর্থনীতি মজবুত হচ্ছে এবং কৌশলগত প্রভাবও বাড়ছে। তবে, বিশ্বের শীর্ষ অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশগুলোর (যেমন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া) তুলনায় ভারতের পথ এখনও অনেকটা। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ২০০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রপ্তানি করেছে, যা ভারতের এবারের রেকর্ডের প্রায় ৭২ গুণ।