আমেরিকা-ইরান যুদ্ধের ছায়া: ডিয়েগো গার্সিয়া ঘাঁটি লক্ষ্যে ইরানের হুমকি

ইরান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, যেখানে ইরান তার সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে যে, যদি ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন আমেরিকা আক্রমণ করে, তবে তারা প্রথমে ব্রিটেনের চাগোস দ্বীপপুঞ্জের দিয়েগো গার্সিয়া সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালাবে। তেহরানের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, “ট্রাম্পকে ইরানে আক্রমণ থেকে বিরত রাখতে আমাদের শীর্ষ সামরিক কমান্ডাররা এই ঘাঁটিকে লক্ষ্যবস্তু হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।” এই হুমকি এসেছে যখন সম্প্রতি দিয়েগো গার্সিয়ায় তিনটি বি-২ স্পিরিট স্টেলথ বোমার বিমান মোতায়েন করা হয়েছে, যা ইরানের ভূগর্ভস্থ সুবিধাগুলো ধ্বংস করতে সক্ষম।
উত্তেজনার পটভূমি: ট্রাম্পের ‘সর্বোচ্চ চাপ’ নীতি
ট্রাম্প তার রাষ্ট্রপতিত্বে ফিরে এসে ‘সর্বোচ্চ চাপ’ নীতি পুনরায় বাস্তবায়ন করেছেন, যার লক্ষ্য ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচী বন্ধ করা এবং তেল রপ্তানি শূন্যে নামিয়ে আনা। সম্প্রতি তিনি ইরানকে সতর্ক করে বলেছেন, “যদি তারা পারমাণবিক চুক্তি মেনে না নেয়, তাহলে এমন বোমা হামলা হবে যা আগে কখনও দেখা যায়নি।” এই হুমকির জবাবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, “যদি আমেরিকা বা ইসরায়েল আমাদের উপর আক্রমণ করে, তাহলে তাদের খুব কঠোর জবাব দেওয়া হবে।” এই বাগাড়ম্বর দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলেছে।
ইরানি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আমেরিকান বোমার বিমান মোতায়েনের পর থেকে দিয়েগো গার্সিয়া সম্পর্কে আলোচনা বেড়েছে।” এই ঘাঁটিতে মোতায়েন বি-২ বিমানগুলো সবচেয়ে উন্নত এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ভেদ করে ইরানের ভূগর্ভস্থ সুবিধাগুলো ধ্বংস করতে সক্ষম। একজন ইরানি বিশ্লেষক বলেন, “১৯৯০-এর দশক থেকেই ইরান এই ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরিকল্পনা করেনি, যা সামরিক নেতৃত্বের একটি বড় ভুল হতে পারে।”
দিয়েগো গার্সিয়া: একটি রণনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি
দিয়েগো গার্সিয়া ব্রিটিশ মালিকানাধীন চাগোস দ্বীপপুঞ্জের বৃহত্তম দ্বীপ, যা ব্রিটেন মরিশাসের কাছে হস্তান্তর করার পরিকল্পনা করছে। তবে, একটি চুক্তির অধীনে ব্রিটেন দ্বীপটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বার্ষিক £৯০ মিলিয়ন খরচে লিজ দেবে, যাতে মার্কিন সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকতে পারে। এই ঘাঁটিতে প্রায় ৪,০০০ সামরিক কর্মী ও ঠিকাদার রয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগ আমেরিকান। ইরান বিশ্বাস করে যে, এই ঘাঁটি তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তু, বিশেষ করে যখন ট্রাম্প তাদের পারমাণবিক কর্মসূচী বন্ধ করতে চাপ দিচ্ছেন।
ইরানের প্রতিক্রিয়া: প্রতিশোধী হুমকি
ইরানি কর্মকর্তা বলেছেন, “যদি আমরা আক্রান্ত হই, তবে আমেরিকান বা ব্রিটিশ বাহিনীর মধ্যে কোনো পার্থক্য করা হবে না। যেকোনো বেস যদি আমেরিকানদের ব্যবহার করে, তা লক্ষ্যবস্তু হবে।” তিনি আরও জানিয়েছেন যে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও সুইসাইড ড্রোন প্রস্তুত, যা দিয়েগো গার্সিয়া সহ অঞ্চলের যেকোনো স্থানে হামলা চালাতে সক্ষম। ইরানি স্টেট মিডিয়া বলেছে, “আমাদের কাছে এই ধরনের হামলার জন্য যথেষ্ট অস্ত্র আছে, যেমন নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ও ৪,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত রেঞ্জের শাহেদ-১৩৬বি কামিকাজ ড্রোন।”
ব্রিটিশ সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা এই হুমকি সবচেয়ে শক্তিশালী ভাষায় নিন্দা করি। দিয়েগো গার্সিয়া বেস ব্রিটেন ও আমেরিকার সুরক্ষার জন্য অত্যাবশ্যক এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।”
বিশ্লেষণ: যুদ্ধের সম্ভাবনা কতটা?
ট্রাম্পের ‘সর্বোচ্চ চাপ’ নীতি ও ইরানের প্রতিশোধী হুমকি মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় সংঘর্ষের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিয়েগো গার্সিয়ার বি-২ বিমানের মোতায়েনকরণ একটি শক্তিশালী বার্তা, যা ইরানকে চুক্তিতে ফিরতে বাধ্য করতে পারে। তবে, ইরানের প্রতিশোধী ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন সক্ষমতা এই সংঘর্ষকে আরও জটিল করতে পারে। একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ খেলা। ট্রাম্পের হুমকি ইরানকে দুর্বল করতে পারে, কিন্তু যুদ্ধের ফলে সমগ্র অঞ্চল জ্বলে উঠতে পারে।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু পোস্টে দেখা গেছে যে, ইরানি নেতৃত্ব বিশ্বাস করছে যে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচী অসামরিক, কিন্তু আমেরিকা এটি একটি হুমকি হিসেবে দেখছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “যদি আমেরিকা ভুল করে, তাহলে ইরান পারমাণবিক অস্ত্রের দিকে এগিয়ে যাবে।”