মায়ানমারে ভূমিকম্পের ধাক্কা: জান্তার যুদ্ধবিরতি, মৃত্যু ৩০০০ ছাড়াল

মায়ানমারে গত শুক্রবারের ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৩,০০০ ছাড়িয়েছে। এই বিপর্যয়ের মধ্যে দেশটির ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার গৃহযুদ্ধে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে। বুধবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এমআরটিভিতে সামরিক হাইকমান্ড জানিয়েছে, ২২ এপ্রিল পর্যন্ত এই বিরতি কার্যকর থাকবে, যাতে ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ সহজ হয়। তবে, সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর প্রতি কড়া শর্ত জারি করা হয়েছে—আক্রমণ বা সংগঠন বাড়ালে ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ নেওয়া হবে।
ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলা
শুক্রবার মধ্যাহ্নে আঘাত হানা এই ভূমিকম্প মায়ানমারের মানচিত্রে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, মৃতের সংখ্যা ৩,০০৩-এ পৌঁছেছে, আহত ৪,৫০০-এর বেশি। রাজধানী নেপিডো ও মান্দালয়ে ভবন ধসে, সড়ক ভেঙে পড়েছে। সাগাইং অঞ্চলে একটি গেস্টহাউস থেকে একজনকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠছে লাশ। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “সবকিছু হঠাৎ কেঁপে উঠল, আমরা বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম।”
যুদ্ধবিরতির পটভূমি
২০২১-এ সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মায়ানমার গৃহযুদ্ধে জর্জরিত। জান্তার বিরুদ্ধে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী ও ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি)-এর মতো বিদ্রোহীরা লড়ছে। ভূমিকম্পের পর এনইউজি ও থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। এরপর জান্তাও পিছু হটে। তবে, সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বিদ্রোহীরা যদি এই সুযোগে শক্তি বাড়ায়, আমরা চুপ থাকব না।” এটি জান্তার কৌশলগত পশ্চাদপসরণ, না সত্যিকারের সহানুভূতি—তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
ত্রাণে বাধা: গৃহযুদ্ধের ছায়া
ভূমিকম্পের আগেই মায়ানমারে ৩০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত ছিল, ২ কোটির বেশি ত্রাণের অপেক্ষায়। জাতিসংঘের মতে, যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে রাস্তা, সেতু ও হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ত্রাণ পৌঁছানো কঠিন। ভারত, চীন, রাশিয়ার মতো দেশ সাহায্য পাঠালেও, সাগাইং-এর মতো বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় পৌঁছানো প্রায় আসাম্ভব। মঙ্গলবার শান রাজ্যে চীনা রেড ক্রসের একটি ত্রাণবাহী কনভয়ে সেনাবাহিনীর গুলি চালানোর ঘটনা এই জটিলতার প্রমাণ। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেন, “সব পক্ষকে ত্রাণ কার্যক্রমে নিরাপত্তা দিতে হবে।”