ট্রাম্পের ২৬% শুল্ক: ভারতের অর্থনীতিতে কী ঝুঁকি, কোন খাতে বড় ধাক্কা?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার ভারতের ওপর ২৬ শতাংশ পারস্পরিক শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, যা দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে তিনি ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির অংশ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “ভারত আমেরিকার পণ্যের ওপর ৫২ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসায়, তাই আমরাও ভারতের ওপর ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করছি।” এই ঘোষণার পর ভারতের অর্থনীতি ও রপ্তানি খাতে এর প্রভাব নিয়ে তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে।
কোন খাতগুলো ঝুঁকিতে?
ট্রাম্পের এই শুল্কনীতি ভারতের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ খাতকে প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষি, ওষুধ, রাসায়নিক, ইলেকট্রনিক্স, যন্ত্রপাতি এবং সামুদ্রিক খাদ্যপণ্যের ওপর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি হবে। গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই)-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাছ, মাংস ও প্রক্রিয়াজাত সামুদ্রিক খাবারে শুল্কের পার্থক্য ২৭.৮৩ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। ২০২৪ সালে এই খাত থেকে ভারতের রপ্তানি ছিল ২.৫৮ বিলিয়ন ডলার। বিশেষ করে চিংড়ি, যা মার্কিন বাজারে ভারতের অন্যতম প্রধান রপ্তানি পণ্য, এই শুল্কের কারণে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে।
এছাড়া, ওষুধ খাতে ১০.৯০ শতাংশ শুল্ক পার্থক্যের সম্মুখীন হতে পারে, যার বার্ষিক টার্নওভার ১২.৭২ বিলিয়ন ডলার। ইলেকট্রনিক্স ও টেলিকমে ৭.২৪ শতাংশ পার্থক্য এবং ১৪.৩৯ বিলিয়ন ডলারের বাজারও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, শুল্কের পার্থক্য যত বেশি, সংশ্লিষ্ট খাতের ক্ষতি তত গভীর হবে।
অর্থনীতিতে সম্ভাব্য প্রভাব
ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ ভারতের অর্থনীতিতে বহুমুখী চাপ সৃষ্টি করতে পারে। প্রথমত, রপ্তানি খরচ বৃদ্ধির ফলে মার্কিন বাজারে ভারতীয় পণ্যের চাহিদা কমতে পারে। দ্বিতীয়ত, বাণিজ্য উত্তেজনা রুপির মানকে দুর্বল করতে পারে, যা আমদানি ব্যয় বাড়িয়ে মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি তৈরি করবে। তৃতীয়ত, বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীরা ভারতের প্রতি আস্থা হারাতে পারেন, যা শেয়ার বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অর্থনীতিবিদ অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, “একটি পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হলে ভারতের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে।”
ভারত কি প্রস্তুত?
তবে সব খারাপ খবর নয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতের অর্থনীতি এই ধাক্কা সামাল দিতে সক্ষম। জিটিআরআই-এর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, মার্কিন বাজারের ওপর ভারতের রপ্তানি নির্ভরতা জিডিপির মাত্র ২ শতাংশ। এছাড়া, রেটিং এজেন্সিগুলো ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ভারতের জন্য ৬.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে, যা G-20 দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, “এটি একটি মিশ্র ফলাফলের পরিস্থিতি, পুরোপুরি পিছিয়ে পড়ার মতো নয়। আমরা প্রভাব বিশ্লেষণ করছি।”
কৌশলগত পদক্ষেপের প্রয়োজন
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, ভারতের এখন বিকল্প বাজারের দিকে নজর দিতে হবে। ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণ এই সংকট কাটিয়ে ওঠার একটি উপায় হতে পারে। পাশাপাশি, দেশীয় শিল্পকে ভর্তুকি ও কর সুবিধা দিয়ে শুল্কের চাপ কমানো যেতে পারে। অর্থনীতিবিদ আকাশ জিন্দাল বলেন, “মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতা কমলেও অন্যত্র সুযোগ রয়েছে। ভারতকে এখনই কৌশল ঠিক করতে হবে।”
বিশ্বব্যাপী প্রেক্ষাপট
ট্রাম্পের শুল্কনীতি শুধু ভারতের জন্য নয়, ৬০টি দেশের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপের পরিকল্পনা রয়েছে। মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির তালিকায় ভারতের পাশাপাশি চীন, কানাডা, মেক্সিকো, জাপানের মতো দেশও রয়েছে। এই পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কাকে আরও জোরালো করছে।