ট্রাম্পের ২৫% শুল্ক: মারুতি-হুন্ডাইয়ের জন্য সংকটের মুখ

ট্রাম্পের ২৫% শুল্ক: মারুতি-হুন্ডাইয়ের জন্য সংকটের মুখ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকাকে আবার ধনী করুন’ প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে ভারতীয় অটোমোবাইল খাতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ কার্যকর হয়েছে। এই ‘ট্রাম্প ট্যারিফ’ আজ থেকে বাস্তবায়িত হওয়ায় মারুতি সুজুকি, হুন্ডাই মোটর ইন্ডিয়ার মতো শীর্ষস্থানীয় কো ম্পা নিগুলো বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ট্রাম্প বলেন, “বিদেশে তৈরি প্রতিটি গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক লাগবে।” এই পদক্ষেপ ভারতের অটো রপ্তানি ও যন্ত্রাংশ শিল্পে গভীর প্রভাব ফেলতে চলেছে।

মারুতি-হুন্ডাইয়ের ওপর ধাক্কা

ভারতের দুই বৃহৎ অটোমোবাইল রপ্তানিকারক—মারুতি সুজুকি ও হুন্ডাই মোটর ইন্ডিয়া—এই শুল্কের সবচেয়ে বড় শিকার হতে পারে। মারুতি সুজুকি ব্যালেনো, জিমনি, গ্র্যান্ড ভিটারা ও ব্রেজার মডেলগুলো আমেরিকায় রপ্তানি করে, যেখানে হুন্ডাই অরা, ভার্না ও আলকাজার পাঠায়। এই শুল্কের ফলে রপ্তানি খরচ ২৫ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় এই গাড়িগুলো মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে। একজন মারুতি কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের মুনাফা কমবে, বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে।”

টয়োটা, হোন্ডা ও ভক্সওয়াগেনের মতো কো ম্পা নিগুলোও ভারত থেকে আমেরিকায় গাড়ি রপ্তানি করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের শীর্ষ তিন অটো রপ্তানি গন্তব্যের একটি। ২০২৪ সালে ভারত থেকে মোট ৪.২ বিলিয়ন ডলারের গাড়ি রপ্তানি হয়েছে, যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আমেরিকায় গেছে।

যন্ত্রাংশ শিল্পেও আঘাত

শুধু গাড়ি নয়, অটো যন্ত্রাংশ রপ্তানিতেও এই শুল্ক বড় ক্ষতি ডেকে আনবে। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের অটো যন্ত্রাংশ শিল্পের আকার ২১.২ বিলিয়ন ডলার, যার এক-তৃতীয়াংশ আমেরিকায় রপ্তানি হয়। ট্রাম্প গত ২৬ মার্চ যন্ত্রাংশের ওপরও শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, যা এখন কার্যকর হয়েছে। অটোমোটিভ কম্পোনেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্মকর্তা বলেন, “এটি আমাদের সাপ্লাই চেইনকে বিপর্যস্ত করবে।”

ক্ষতির পরিমাণ

একটি প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে, ১০ শতাংশ শুল্ক হলে ভারতের রপ্তানি ক্ষতি হতো ৬ বিলিয়ন ডলার। ২৫ শতাংশ শুল্কে এই ক্ষতি ৩১ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ২.৬৬ লক্ষ কোটি টাকা) পর্যন্ত হতে পারে। অর্থনীতিবিদ রাহুল বাজাজ বলেন, “এটি শুধু অটো খাত নয়, সংশ্লিষ্ট শিল্প ও কর্মসংস্থানের ওপরও চাপ সৃষ্টি করবে।”

ট্রাম্পের যুক্তি

‘আমেরিকাকে আবার ধনী করুন’ অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, “ভারত আমাদের পণ্যে ৫২ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসায়। আমরা ২৬ শতাংশ দিয়ে পারস্পরিক ভারসাম্য আনছি।” তিনি দাবি করেন, এটি মার্কিন শিল্পকে রক্ষা করবে। তবে, ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, এই হিসেব সব খাতের জন্য প্রযোজ্য নয় এবং আলোচনার সুযোগ ছিল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *