চলন্ত ট্রেনে নাবালিকার উপর নৃশংস অত্যাচার: ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার

হায়দরাবাদ, ৬ এপ্রিল ২০২৫: চলন্ত ট্রেনে এক নাবালিকার উপর ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা সমাজের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। তেলেঙ্গানার সেকেন্দ্রাবাদ রেলওয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়া এই মর্মান্তিক ঘটনায় অভিযুক্ত এক ২০ বছর বয়সী যুবক, যে নাবালিকাকে ট্রেনের টয়লেটে অনুসরণ করে নৃশংসভাবে লাঞ্ছিত ও ধর্ষণ করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩ এপ্রিল সকালে, যখন মেয়েটি তার পরিবারের সাথে ভ্রমণ করছিল।
ঘটনার বিবরণ: কীভাবে ঘটল এই অপরাধ?
সরকারি রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার নাবালিকা তার বাবা-মা ও ভাইবোনদের সাথে ট্রেনে উঠেছিল। অভিযুক্ত, যিনি পরিবারের পাশের আসনে বসেছিলেন, মেয়েটি টয়লেটে যাওয়ার সময় তার পিছু নেন। পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, অভিযুক্ত তাকে টয়লেটে ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় আটকে রেখে নির্যাতন করে এবং ধর্ষণের ঘটনাটি ভিডিও করে। পরে ভয় দেখিয়ে বলে, “কাউকে বললে ভিডিও ছড়িয়ে দেব।” এরপর মেয়েটিকে তার আসনে ফিরতে দেওয়া হয়।
সকালে মেয়েটি কাঁপতে কাঁপতে তার বাবা-মাকে ঘটনাটি জানালে, বাবা অভিযুক্তের মুখোমুখি হন। অভিযুক্তের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তিনি মেয়ের ছবি ও ভিডিও দেখতে পান। এরপরই পরিবারটি জিআরপি-র কাছে অভিযোগ দায়ের করে। পকসো আইন, ধর্ষণ এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা রুজু হয়েছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তার ফোন থেকে প্রমাণ উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশের বক্তব্য ও তদন্ত
সেকেন্দ্রাবাদ রেলওয়ে পুলিশ স্টেশনের এক আধিকারিক জানান, “অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার ফোন থেকে ভিডিও ও ছবি উদ্ধার করা হয়েছে, যা তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।” তিনি আরও বলেন, “এটি একটি জঘন্য অপরাধ, এবং আমরা দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে কাজ করছি।” তদন্তে জানা গেছে, অভিযুক্ত একাই এই কাজ করেছে, তবে অন্য কেউ জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এর আগেও একই ধরনের ঘটনা
এই ঘটনার মাত্র কয়েকদিন আগে, ২২ মার্চ, আরেকটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছিল। সেকেন্দ্রাবাদ থেকে মেডচালগামী এমএমটিএস ট্রেনের মহিলা কোচে ২৩ বছর বয়সী এক নারী ধর্ষণের চেষ্টা থেকে বাঁচতে চলন্ত ট্রেন থেকে ঝাঁপ দেন। হায়দরাবাদের উত্তর জোনের এসপি চন্দনা দীপ্তি জানিয়েছিলেন, “ভুক্তভোগী আলওয়াল স্টেশনে অন্য যাত্রীদের নামার পর একা হয়ে পড়েন। তখন এক অজ্ঞাত ব্যক্তি কোচে ঢুকে তাকে আক্রমণ করে।” ওই নারী বর্তমানে গান্ধী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, এবং অভিযুক্তকে ধরতে চারটি বিশেষ দল মোতায়েন করা হয়েছে।
বিশ্লেষণ: ট্রেনে নারী নিরাপত্তা কোথায়?
এই দুটি ঘটনা ট্রেনে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তার ভঙ্গুর অবস্থার দিকে ইঙ্গিত করে। বিশেষজ্ঞরමඉদানীং চলন্ত ট্রেনে নারী ও শিশু নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর পর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন উঠছে—কেন এখনও পর্যাপ্ত নজরদারি বা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই? সমাজবিজ্ঞানী রিনা চৌধুরী বলেন, “চলন্ত ট্রেনে এমন ঘটনা শুধু আইনশৃঙ্খলার ব্যর্থতাই নয়, সমাজে নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিরও প্রতিফলন।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, নারীদের জন্য নির্দিষ্ট কোচ থাকলেও সেখানে পুরুষদের প্রবেশ ঠেকানোর কার্যকর ব্যবস্থা নেই।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
রেলওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, ট্রেনে সিসিটিভি ক্যামেরা ও নিয়মিত টহল বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এই প্রতিশ্রুতি আগেও দেওয়া হয়েছে, এবং বাস্তবায়নের গতি ধীর। এই ঘটনার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। অনেকে মনে করেন, শুধু শাস্তি নয়, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাই এখন জরুরি।
নাবালিকার পরিবারের এক সদস্য বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম ট্রেনে আমাদের মেয়ে নিরাপদ। কিন্তু এখন আমাদের ভরসা ভেঙে গেছে।” এই ঘটনা কেবল একটি পরিবারেরই নয়, গোটা সমাজের আস্থার সংকটের প্রতীক হয়ে উঠেছে।