সুপ্রিম কোর্ট কি ওয়াকফ বিল বাতিল করতে পারে? সংবিধান কী বলে?

সুপ্রিম কোর্ট কি ওয়াকফ বিল বাতিল করতে পারে? সংবিধান কী বলে?

নয়াদিল্লি, ৬ এপ্রিল ২০২৫: ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল গত ২ এপ্রিল লোকসভায় এবং ৩ এপ্রিল রাজ্যসভায় পাস হয়েছে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা এই বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার পথে। কিন্তু সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এটি এখন সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। দেশবাসীর মনে একটাই জিজ্ঞাসা—সুপ্রিম কোর্ট কি এই বিল বাতিল করতে পারে? উত্তর খুঁজতে আমাদের ভারতীয় সংবিধানের দিকে তাকাতে হবে।

সংবিধানের তিন স্তম্ভ: ক্ষমতার ভারসাম্য

ভারতীয় গণতন্ত্র আইনসভা, নির্বাহী বিভাগ এবং বিচার বিভাগ—এই তিন স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে। সংবিধানে এদের ক্ষমতা ও দায়িত্ব স্পষ্টভাবে বণ্টন করা হয়েছে। আইনসভা আইন প্রণয়ন করে, নির্বাহী বিভাগ তা কার্যকর করে, আর বিচার বিভাগ নজর রাখে যে সবকিছু সংবিধানের আলোকে হচ্ছে কি না। এই তিনটি স্তম্ভের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আইনসভা নির্বাহী বিভাগের ওপর অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারে, আবার নির্বাহী বিভাগের হাতে আইনসভা ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। বিচার বিভাগ তাদের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে সংবিধানের সীমা লঙ্ঘন রোধ করে।

সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা কী?

ওয়াকফ বিলের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন দায়ের হওয়া অস্বাভাবিক নয়। সংবিধানের ব্যাখ্যা করা এবং আইনের সাংবিধানিকতা যাচাই করা বিচার বিভাগের মূল কাজ। কিন্তু প্রশ্ন হল, সংসদে পাস হওয়া এই বিলের ভাগ্য কী হবে? আইন বিশেষজ্ঞ অধোধ্যা নাথ মিশ্র বলেন, “সংবিধানে বিচার বিভাগ ও আইনসভার কাজে হস্তক্ষেপের স্পষ্ট নিষেধ রয়েছে। একবার বিল সংসদে পাস হয়ে গেলে, সুপ্রিম কোর্ট সরাসরি তা বাতিল করতে পারে না। তবে বিলের কোনও নির্দিষ্ট ধারা সংবিধানবিরোধী হলে, আদালত তা পর্যালোচনা করে আইনসভাকে পরামর্শ দিতে পারে। এটি বাধ্যতামূলক রায় নয়, কেবল সুপারিশ।”

বিলের যাত্রা: সাংবিধানিক পথে

ওয়াকফ বিল ২০২৪ সালের আগস্টে সংসদে উত্থাপিত হয়। এরপর যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) এটি বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করে। জেপিসির সুপারিশের ভিত্তিতে পরিবর্তন আনা হয় এবং বিলটি সংসদে ফিরে এসে পাস হয়। প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ সাংবিধানিক এবং স্বচ্ছ। বিতর্কের সময় সব পক্ষের মতামত শোনা হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে, আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সুপ্রিম কোর্টের পক্ষে বিলটির ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়া কঠিন।

বিরোধীদের উদ্বেগ কী?

বিলটির বিরোধীরা দাবি করছেন, এটি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারে। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এর উদ্দেশ্য ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা। এই দ্বন্দ্বই বিলটিকে আদালতের দরজায় নিয়ে গেছে।

সুপ্রিম কোর্ট কী করতে পারে?

বিশ্লেষকদের মতে, সুপ্রিম কোর্ট বিলটি পুরোপুরি বাতিল না করে এর কোনও ধারার সাংবিধানিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনও বিধান মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে প্রমাণিত হয়, তবে আদালত সংসদকে তা সংশোধনের পরামর্শ দিতে পারে। তবে এটি আইনসভার সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি আঘাত করবে না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *