‘ভারতের সাহায্য অবিস্মরণীয়’, মোদীর সফরে শ্রীলঙ্কার গণমাধ্যমের প্রশংসা

‘ভারতের সাহায্য অবিস্মরণীয়’, মোদীর সফরে শ্রীলঙ্কার গণমাধ্যমের প্রশংসা

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দুই দিনের শ্রীলঙ্কা সফর কেবল দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে তাই নয়, শ্রীলঙ্কার গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসাও কুড়িয়েছে। শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি অনুরা কুমারা দিসানায়েকে মোদীকে ‘মিত্র বিভূষণায়’ পুরস্কারে ভূষিত করা এবং একাধিক গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরের পর গণমাধ্যম এই সফরকে ‘ঐতিহাসিক’ ও ‘সম্পর্কের মাইলফলক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার সংবাদমাধ্যম কীভাবে এই সফরকে দেখছে? আসুন বিশ্লেষণ করি।

সফরের হাইলাইটস

শনিবার কলম্বোর ইন্ডিপেন্ডেন্স স্কোয়ারে মোদীকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। এরপর তিনি রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ে গিয়ে শ্রীলঙ্কার শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন। নতুন সরকার গঠনের পর এটি মোদীর প্রথম শ্রীলঙ্কা সফর। এই সফরে জ্বালানি, ডিজিটাল প্রযুক্তি, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও পূর্ব প্রদেশের উন্নয়ন নিয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ভারত, শ্রীলঙ্কা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক জ্বালানি চুক্তিও উল্লেখযোগ্য।

শ্রীলঙ্কার গণমাধ্যমের দৃষ্টিভঙ্গি

শ্রীলঙ্কার সরকারি সংবাদপত্র ডেইলি নিউজ এই সফরকে ‘দুই দেশের দীর্ঘমেয়াদী বন্ধনের প্রতীক’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। এক সম্পাদকীয়তে পত্রিকাটি লেখে, “ভারতের সাহায্য আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। তিন দশকের গৃহযুদ্ধের সমাপ্তিতে ভারতের ভূমিকা এবং সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংকটে তাদের সমর্থন আমাদের কৃতজ্ঞতার দাবি রাখে।” পত্রিকাটি আরও জানায়, “মোদীর সফর এই সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করেছে। ভারতের উদারতা শ্রীলঙ্কার জন্য একটি সম্পদ।”

ডেইলি মিরর মোদীর সফরকে ‘বড় অনুষ্ঠান’ হিসেবে উল্লেখ করে। প্রতিরক্ষা সচিব সম্পথ থুয়াকোঁথার উদ্ধৃতি দিয়ে তারা লেখে, “ভারত-শ্রীলঙ্কা প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব আমাদের জন্য অমূল্য। এই চুক্তিগুলো আন্তর্জাতিক নীতি ও জাতীয় আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।” পত্রিকাটি সফরের প্রতিটি দিক বিস্তারিতভাবে কভার করেছে।

লঙ্কদীপ মোদীর সফরকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। বিরোধী নেতা সাজিথ প্রেমাদাসার সঙ্গে মোদীর বৈঠকের উল্লেখ করে তারা লেখে, “দেউলিয়া হওয়ার সময় ভারতই আমাদের পাশে ছিল।” প্রেমাদাসার বক্তব্য উদ্ধৃত করে পত্রিকাটি জানায়, “এই সম্পর্ক লালন করা উচিত। দুই দেশের ঐক্য ও অখণ্ডতা রক্ষায় আমাদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে হবে।”

তামিল গণমাধ্যম বীরকেশরী পাহাড়ি অঞ্চলের তামিলদের সঙ্গে মোদীর সাক্ষাতের ওপর জোর দিয়েছে। “ভারত তামিল জনগণের জন্য ১০,০০০ ঘর ও স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্প ঘোষণা করেছে। এটি দুই দেশের সম্পর্কের গভীরতা দেখায়,” লেখে পত্রিকাটি।

বিশ্লেষণ: সম্পর্কের নতুন অধ্যায়

শ্রীলঙ্কার গণমাধ্যমের প্রতিক্রিয়া থেকে স্পষ্ট, মোদীর সফর কেবল কূটনৈতিক আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং দুই দেশের ঐতিহাসিক বন্ধনের পুনরুত্থান। “ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক শ্রীলঙ্কার জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনৈতিক সংকটে ভারতের ৪ বিলিয়ন ডলারের সাহায্য এবং জ্বালানি সরবরাহ এখনও শ্রীলঙ্কার মানুষের মনে গেঁথে আছে,” বলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক প্রিয়া সেন। তিনি যোগ করেন, “এই সফরে জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা চুক্তি ভারতের ‘নেবারহুড ফার্স্ট’ নীতির প্রতিফলন।”

শ্রীলঙ্কার গণমাধ্যমও অতীতের উত্তেজনার কথা উল্লেখ করেছে। ডেইলি নিউজ লেখে, “ভূ-রাজনীতির কারণে সম্পর্কে ফাটল ধরলেও, ভারতের সাম্প্রতিক ভূমিকা সেসব ভুলিয়ে দিয়েছে।” এটি ইঙ্গিত দেয় যে শ্রীলঙ্কা ভারতকে একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিবেশী হিসেবে দেখছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *