ট্রাম্পের শুল্কের আগে অ্যাপলের দৌড়: ভারত-চীন থেকে আমেরিকায় পণ্যের বন্যা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতির ছায়া পড়তেই বিশ্বব্যাপী কো ম্পা নিগুলো শেষ মুহূর্তে রপ্তানির হিড়িকে পড়েছে। এর মধ্যে অ্যাপল নজিরবিহীন তৎপরতা দেখিয়ে ভারত ও চীন থেকে প্রচুর পরিমাণে আইফোন ও অন্যান্য পণ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে। শনিবার মধ্যরাত থেকে কার্যকর হওয়া ১০% বেসলাইন শুল্ক এড়াতে এই কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারতও এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে রপ্তানিতে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য আশার আলো জাগিয়েছে।
শুল্কের ভয়ে অ্যাপলের তাড়াহুড়ো
ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষিত ‘পাল্টা শুল্ক’ নীতি বিশ্ব বাণিজ্যে নতুন ঝড় তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে অ্যাপল মাত্র তিন দিনে পাঁচটি কার্গো বিমানে আইফোন ও ইলেকট্রনিক পণ্য মার্কিন গুদামে পাঠিয়েছে। টাইমস অফ ইন্ডিয়া-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, কো ম্পা নিটি ভারত ও চীনের উৎপাদন কেন্দ্র থেকে এই চালান পাঠিয়েছে, যদিও এটি সাধারণত কেনাকাটার মন্দা সময়। এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, “শুল্ক বৃদ্ধির আগে স্টক মজুত করাই অ্যাপলের লক্ষ্য ছিল। এটি কেবল অ্যাপল নয়, অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স কো ম্পা নিগুলোও একই পথে হেঁটেছে।”
ভারত থেকে রপ্তানি গত বছর ৪৩৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। এবার মার্চে শেষ হওয়া আর্থিক বছরে পণ্য ও পরিষেবা রপ্তানি ৮০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই ঊর্ধ্বগতির পেছনে শুল্ক আরোপের ভয়ে শেষ মুহূর্তের চালান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
রত্ন-গহনা ও পোশাকে রপ্তানির ঢেউ
শুধু ইলেকট্রনিক্স নয়, ভারতের রত্ন ও গহনা খাতেও অভূতপূর্ব বৃদ্ধি দেখা গেছে। মুম্বাইয়ের প্রিশিয়াস কার্গো ক্লিয়ারেন্স সিস্টেমের তথ্য অনুযায়ী, ১ থেকে ৪ এপ্রিলের মধ্যে এই খাতের রপ্তানি ছয়গুণ বেড়ে ৩৪৪ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা গত বছর একই সময়ে ছিল মাত্র ৬১ মিলিয়ন ডলার। রত্ন ও জুয়েলারি রপ্তানি উন্নয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান কিরীট বানসালি বলেন, “মার্চের শেষ সপ্তাহে রপ্তানিতে অসাধারণ উল্লম্ফন ঘটেছে। শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে আমরা আমেরিকায় পণ্য পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি।” পোশাক খাতেও একই প্রবণতি লক্ষ্য করা গেছে।
ভারতের জন্য সুযোগ না চ্যালেঞ্জ?
ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ভারতের জন্য দ্বিমুখী প্রভাব ফেলতে পারে। একদিকে, শেষ মুহূর্তের রপ্তানি বৃদ্ধি অর্থনীতিকে চাঙ্গা করেছে। ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশন (FIEO)-এর মহাপরিচালক অজয় সহাই বলেন, “যেসব পণ্য বিমানে দ্রুত পাঠানো সম্ভব, সেগুলোর রপ্তানি বেড়েছে। আমি আশা করছি, ২০২৫ সালের মার্চে রপ্তানি ৪০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।” তবে, দীর্ঘমেয়াদে শুল্ক বৃদ্ধি ভারতীয় পণ্যের প্রতিযোগিতা কমিয়ে দিতে পারে।
২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে ভারতের পণ্য রপ্তানি ৩% কমে ৭৭৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছিল। এবার শুল্কের চাপে কো ম্পা নিগুলো দাম বাড়াতে বা বাজার হারাতে পারে। “অ্যাপলের মতো বড় কো ম্পা নি ভারত থেকে উৎপাদন বাড়ালেও, শুল্কের কারণে আমেরিকায় দাম বাড়লে চাহিদা কমতে পারে,” বলেন অর্থনীতিবিদ রেখা শর্মা।