“৬০ টন সোনার ঝলক: মায়ানমারের শ্বেদাগন প্যাগোডার মহিমা”

ভারতের প্রতিবেশী মায়ানমারের রাজধানী ইয়াঙ্গুনে দাঁড়িয়ে আছে শ্বেদাগন প্যাগোডা—বিশ্বের বৃহত্তম সোনায় মোড়া স্থাপত্য বিস্ময়। ১১২ মিটার উঁচু এই প্যাগোডায় রয়েছে প্রায় ৬০ টন সোনা আর ৪৫৩১টি হীরা, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বৌদ্ধ ভক্তদের দানে সমৃদ্ধ হয়েছে। এর ঝলমলে সৌন্দর্য ও আধ্যাত্মিক গভীরতা এটিকে শুধু একটি ধর্মীয় স্থান নয়, বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রতীকও করে তুলেছে।
সোনার স্তরে ঢাকা বিশালতা
শ্বেদাগন প্যাগোডার স্তূপটি ইটের ভিত্তির ওপর নির্মিত, যার প্রতিটি ইঞ্চি খাঁটি সোনার পাতে আচ্ছাদিত। স্থানীয় গাইডদের মতে, এতে ৬ থেকে ৬০ টন সোনা রয়েছে, তবে সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ কঠিন। “শতাব্দী ধরে রাজা, ভক্ত ও নাগরিকরা সোনা দান করেছেন, তাই এর পরিমাণ ক্রমশ বেড়েছে,” বলেন ইয়াঙ্গুনের এক পর্যটন গাইড আং মিন। প্যাগোডার শীর্ষে, যাকে ‘ছাতা’ বলা হয়, সেখানে ৪৫৩১টি হীরার মধ্যে একটি ৭২ ক্যারেটের, যা সূর্যের আলোয় ঝকঝক করে। এছাড়া ২৩১৭টি রুবি ও অন্যান্য রত্ন এর মহিমা বাড়িয়েছে।
যুদ্ধেও অটুট মর্যাদা
গত চার বছরে মায়ানমারে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি থাকলেও শ্বেদাগন প্যাগোডার ওপর এর কোনও প্রভাব পড়েনি। “এটি আমাদের বিশ্বাসের কেন্দ্র। যুদ্ধের মধ্যেও এর পবিত্রতা অক্ষুণ্ণ,” বলেন স্থানীয় বাসিন্দা কো থান। প্রতিদিন হাজারো ভক্ত এখানে প্রার্থনা ও ধ্যানে মগ্ন হন। এর স্থাপত্য ও ধর্মীয় গুরুত্ব এটিকে সংকটের ঊর্ধ্বে রেখেছে।
ইউনেস্কোর স্বীকৃতি
ইউনেস্কো শ্বেদাগনকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। ৪৬ হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই কমপ্লেক্সে রয়েছে চারটি প্রধান সিঁড়ি, শতাধিক ছোট মন্দির, মূর্তি ও ঘণ্টা। এর নকশা প্রাচীন হিন্দু-বৌদ্ধ মহাজাগতিক দর্শনের প্রতিফলন। “এটি কেবল সোনা বা হীরার জন্য নয়, এর স্থাপত্য ও ঐতিহাসিক মূল্য অতুলনীয়,” বলেন ইতিহাসবিদ ড. সু মিন।
আধ্যাত্মিক তাৎপর্য
বৌদ্ধ ধর্মে শ্বেদাগন সবচেয়ে পবিত্র স্থান। কিংবদন্তি অনুসারে, এখানে গৌতম বুদ্ধের আটটি চুল সহ চার পূর্ববর্তী বুদ্ধের ধাতু সংরক্ষিত আছে। ভক্তরা ঘড়ির কাঁটার দিকে স্তূপ প্রদক্ষিণ করে ভক্তি প্রকাশ করেন। “এটি আমাদের আত্মার সঙ্গে জড়িত। সোনা দান করা মানে বুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো,” বলেন এক ভক্ত, মা ইয়ে। ১৫শ শতকে রানি শিন সাউবু তার শরীরের ওজনের সমান সোনা দান করেছিলেন, যা আজও চলমান ঐতিহ্য।