“ট্রাম্পের প্রশংসার মাঝে চীনের প্রতিশোধ: বাণিজ্য যুদ্ধে কে এগিয়ে?”

“ট্রাম্পের প্রশংসার মাঝে চীনের প্রতিশোধ: বাণিজ্য যুদ্ধে কে এগিয়ে?”

আমেরিকা-চীন বাণিজ্য যুদ্ধে নতুন মোড় এসেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যে ১২৫% শুল্ক আরোপ করেছেন, জবাবে চীন আমেরিকান পণ্যে ৮৪% শুল্ক ধার্য করে প্রতিশোধ নিয়েছে। এই উত্তেজনার মধ্যেই ট্রাম্প চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে “বুদ্ধিমান মানুষ” বলে প্রশংসা করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন। তবে, চীনের কঠোর জবাব কি ট্রাম্পকে পিছু হটতে বাধ্য করেছে, নাকি এটি কৌশলগত নরমতার ইঙ্গিত? আসুন বিশ্লেষণ করি।

ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত প্রশংসা

হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে ট্রাম্প বলেন, “শি জিনপিং একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি। আমরা খুব ভালো চুক্তি করব। তিনি তার দেশকে ভালোবাসেন এবং জানেন কী করতে হবে।” তিনি আরও ইঙ্গিত দেন, “যেকোনো মুহূর্তে চীন থেকে ফোন আসতে পারে, তারপর আলোচনা শুরু হবে।” এই মন্তব্য এমন সময়ে এসেছে, যখন ট্রাম্প চীনকে “বৈশ্বিক বাণিজ্য নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাহীন” বলে ৯০ দিনের শুল্ক স্থগিতাদেশ থেকে বাদ দিয়েছেন। অন্যদিকে, অন্যান্য দেশের জন্য এই স্থগিতাদেশ কার্যকর রয়েছে।

চীনের কঠোর প্রতিক্রিয়া

চীন ট্রাম্পের শুল্ককে “ব্ল্যাকমেইল” আখ্যা দিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, “যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ ভুলের ওপর ভুল। আমরা শেষ পর্যন্ত লড়ব।” আমেরিকার ১৪৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির ওপর ৮৪% শুল্ক আরোপের পাশাপাশি চীন বিরল খনিজ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ও মার্কিন কো ম্পা নির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। “চীন চাপের কাছে মাথা নত করবে না,” বলেন বেইজিং-ভিত্তিক অর্থনীতিবিদ লি চ্যাং।

বিশ্ববাজারে অস্থিরতা

এই শুল্কযুদ্ধের ধাক্কা বিশ্ববাজারে স্পষ্ট। মার্কিন ডাও জোন্স ১০০০ পয়েন্ট পড়েছে, এশিয়ার বাজারগুলোও ৩-৪% হ্রাস পেয়েছে। তবে, ৯০ দিনের স্থগিতাদেশের ঘোষণায় কিছুটা পুনরুদ্ধার দেখা গেছে। “এটি বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলার জন্য হুমকি,” বলেন ক্যাপিটাল ইকোনমিক্সের বিশ্লেষক লিয়া ফাহি। চীন গত ৮ বছরে আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য উত্তেজনা মোকাবিলার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, যা তাদের এবার শক্ত অবস্থানে রেখেছে।

ট্রাম্প পিছিয়ে পড়েছেন কি?

চীনের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ ট্রাম্পকে চাপে ফেললেও তিনি পিছু হটছেন না। তিনি জিনপিংয়ের প্রশংসা করে আলোচনার দরজা খোলা রেখেছেন। “ট্রাম্প চাপে আছেন, তবে এটি তার কৌশলও হতে পারে,” বলেন ওয়াশিংটনের বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ জন হ্যারিস। চীনের ৪৩৮ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বাজারের তুলনায় আমেরিকার রপ্তানি অনেক কম, যা চীনকে লড়াইয়ে সুবিধা দেয়। তবে, ট্রাম্পের দাবি, “আমেরিকায় বিনিয়োগই সেরা,” তার দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনার ইঙ্গিত।

সম্পর্কে নরমতার সম্ভাবনা?

ট্রাম্পের প্রশংসা ও আলোচনার প্রস্তাব সত্ত্বেও চীনের কঠোর অবস্থান সমঝোতার পথ কঠিন করে তুলেছে। “জিনপিং হাল ছাড়বেন না, তবে আলোচনার জানালা বন্ধ হয়নি,” বলেন এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক কাটলার। বিশ্ব অর্থনীতির জন্য এই যুদ্ধ মূল্যবান হতে পারে—মার্কিন ক্রেতাদের জন্য দাম বাড়বে, চীনে চাহিদা কমবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *