ডাক্তার থেকে সন্ত্রাসী: তাহাভুর রানার রহস্যময় জীবন!

২০০৮ সালের মুম্বাই হামলায় ১৬৬ জনের প্রাণহানির পেছনে যে মানুষটির নাম বারবার উঠে এসেছে, তাহাভুর হোসেন রানা, অবশেষে ভারতের মাটিতে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রাক্তন ডাক্তার থেকে মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী—তার এই অভাবনীয় যাত্রা শুরু হয়েছিল শৈশবের বন্ধু ডেভিড কোলম্যান হেডলির হাত ধরে। ১৫ বছরের আইনি লড়াইয়ের পর আমেরিকা থেকে প্রত্যর্পিত রানা এখন জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) হেফাজতে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে একজন চিকিৎসক সন্ত্রাসের পথ বেছে নিলেন?
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে জন্ম নেওয়া রানা মেডিকেল পড়াশোনা শেষে সেনাবাহিনীতে ডাক্তার হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৯০-এর দশকের শেষে তিনি কানাডায় পাড়ি জমান, নাগরিকত্ব নেন এবং শিকাগোতে ‘ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস’ নামে ব্যবসা গড়ে তোলেন। বাইরে থেকে সফল উদ্যোক্তা হলেও, ভেতরে ভেতরে তিনি হেডলির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন লস্কর-ই-তৈয়বার ষড়যন্ত্রে। এনআইএ-র তথ্য বলছে, রানা হেডলির ভারতীয় ভিসার ব্যবস্থা করেন এবং তার অভিবাসন ব্যবসাকে ঢাল করে মুম্বাইয়ের লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করতে সাহায্য করেন। ২০০৮ সালের নভেম্বরে তিনি নিজেও ভারতে এসেছিলেন, হামলার মাত্র পাঁচ দিন আগে দেশ ছাড়েন।
তার গল্প শুধু ব্যক্তিগত পতনের নয়, বরং একটি বৃহৎ সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের প্রতিচ্ছবি। হেডলির সঙ্গে ২৩১ বার ফোনে কথা, মুম্বাইয়ের তাজ হোটেল থেকে চাবাদ হাউস পর্যন্ত গোয়েন্দাগিরি—রানার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্লেষকরা বলছেন, তার শিক্ষা ও পেশাদারিত্ব তাকে সন্ত্রাসীদের জন্য আরও বিপজ্জনক করে তুলেছিল। এনআইএ-র এক কর্মকর্তা জানান, “রানার হেফাজত আমাদের ২৬/১১-এর পাকিস্তানি সংযোগ আরও স্পষ্ট করবে।” ভারতে তার বিচার এখন ন্যায়বিচারের পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একটি শক্ত বার্তা। একজন ডাক্তারের এই রূপান্তর আমাদের মনে করিয়ে দেয়, শত্রু যে কোনো মুখোশে লুকিয়ে থাকতে পারে।