তামিলনাড়ুতে বিজেপি-এআইএডিএমকে জোটের ঘোষণা: শাহ’র হুঁশিয়ারি, ‘ডিএমকে-র দুর্নীতির শেষ হবে’

তামিলনাড়ুতে বিজেপি-এআইএডিএমকে জোটের ঘোষণা: শাহ’র হুঁশিয়ারি, ‘ডিএমকে-র দুর্নীতির শেষ হবে’

তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক আঙিনায় বড় ধরনের রদবদলের ঘোষণা এলো। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং রাজ্যের প্রভাবশালী আঞ্চলিক দল অল ইন্ডিয়া আন্না দ্রাবিড় মুন্নেত্র কঝগম (এআইএডিএমকে) আসন্ন লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের জন্য জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই জোটকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, “এটি কেবল রাজনৈতিক ঐক্য নয়, তামিলনাড়ুর উন্নয়ন ও স্বচ্ছ শাসনের প্রতিশ্রুতি।” তিনি দাবি করেন, এই জোট জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটকে (এনডিএ) আরও শক্তিশালী করবে এবং রাজ্যে ক্ষমতাসীন দ্রাবিড় মুন্নেত্র কঝগম (ডিএমকে) সরকারের দুর্নীতির অবসান ঘটাবে।

জোটের পটভূমি ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

বিজেপি রাজ্য সভাপতি কে. আন্নামালাইয়ের পদত্যাগের পর এই জোটের ঘোষণা এসেছে, যা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। শাহ চেন্নাইয়ে এক জনসভায় বলেন, “১৯৯৮ সালে প্রয়াত জয়ললিতা এবং অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে আমরা একসঙ্গে লড়েছিলাম। তখন ৩৯টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৩০টি জিতেছিলাম। সেই বিশ্বাস ও আদর্শের ভিত্তিতেই আমরা আবার একত্রিত হয়েছি।” তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং জয়ললিতার সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, “দুই নেতাই তামিলনাড়ুর উন্নয়নের জন্য একসঙ্গে কাজ করেছেন। আমরা সেই পথেই এগোব।”

এআইএডিএমকে-র সাধারণ সম্পাদক এডাপ্পাডি কে. পালানিস্বামী (ইপিএস) জোটের নেতৃত্ব দেবেন। শাহ স্পষ্ট করেছেন, “রাজ্যে আমাদের মুখ ইপিএস, আর জাতীয় স্তরে প্রধানমন্ত্রী মোদী।” তবে তিনি আসন ভাগাভাগি বা মন্ত্রীপদ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি, শুধু জানিয়েছেন, “উপযুক্ত সময়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।”

ডিএমকে-র বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ

শাহ ডিএমকে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ তুলে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনের সরকার প্রায় ৩৯,০০০ কোটি টাকার কেলেঙ্কারিতে জড়িত। মদ কেলেঙ্কারি, মনরেগা কেলেঙ্কারি—এসবের জন্য তামিলনাড়ুর জনগণ স্ট্যালিন ও উদয়নিধি স্ট্যালিনকে কখনো ক্ষমা করবে না।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, ডিএমকে ইচ্ছাকৃতভাবে সনাতন ধর্ম ও তামিল ভাষার মতো বিষয় উত্থাপন করে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরাচ্ছে। “এবারের নির্বাচনে প্রকৃত ইস্যু হবে দুর্নীতি। জনগণ উন্নয়ন ও স্বচ্ছতার পক্ষে রায় দেবে,” বলেন তিনি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শাহ’র এই বক্তব্য ডিএমকে-র বিরুদ্ধে জনমত গঠনের কৌশল। তামিলনাড়ু বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. সর্বানন্দম বলেন, “দুর্নীতির অভিযোগ তামিলনাড়ুর ভোটারদের কাছে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। শাহ এই ইস্যুকে কেন্দ্রে রেখে ভোটারদের আবেগকে কাজে লাগাতে চাইছেন।”

জোটের শর্ত ও সম্ভাবনা

শাহ জোর দিয়ে বলেছেন, বিজেপি এআইএডিএমকে-র অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। “এই জোট পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। আমরা একসঙ্গে নির্বাচন লড়ব, তবে এআইএডিএমকে-র সিদ্ধান্তে আমরা কোনো হস্তক্ষেপ করব না,” বলেন তিনি। তিনি আরও জানান, নির্বাচনের পর সরকারে যোগদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এআইএডিএমকে-র একটি সূত্র জানায়, দলটি এই জোটের মাধ্যমে গ্রামীণ ভোটারদের সমর্থন ধরে রাখতে চায়, যখন বিজেপি শহুরে ও মধ্যবিত্ত ভোটারদের দিকে নজর দিচ্ছে। “এই জোট তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে ভারসাম্য আনতে পারে,” বলেন দলটির এক নেতা।

রাজনৈতিক প্রভাব ও চ্যালেঞ্জ

তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে দ্রাবিড় দলগুলোর আধিপত্য দীর্ঘদিনের। তবে বিজেপি গত এক দশকে রাজ্যে নিজেদের অবস্থান জোরদার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এআইএডিএমকে-বিজেপি জোট গঠন করলেও ডিএমকে জয়ী হয়। এবারের জোট কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে।

বিশ্লেষক ড. সর্বানন্দম বলেন, “এআইএডিএমকে-র গ্রামীণ ভিত্তি এবং বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রভাব একত্রিত হলে জোটটি শক্তিশালী হতে পারে। তবে ডিএমকে-র সাংগঠনিক শক্তি এবং তাদের সমাজকল্যাণ প্রকল্পগুলো এখনো ভোটারদের মধ্যে জনপ্রিয়।”

জনগণের প্রত্যাশা

চেন্নাইয়ের একজন স্থানীয় বাসিন্দা রমেশ কুমার বলেন, “আমরা দুর্নীতিমুক্ত সরকার চাই। যদি এই জোট স্বচ্ছতা ও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারে, তাহলে আমরা তাদের সমর্থন করব।” অন্যদিকে, কোয়েম্বাটুরের ছাত্রী প্রিয়া রাও বলেন, “ডিএমকে-র শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রকল্প আমাদের জন্য উপকারী। নতুন জোটের কী পরিকল্পনা, তা আমরা দেখতে চাই।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *