অলৌকিক ঘটনা : কোরবানির ছাগল বেঁচে গেল, উল্টে প্যাটেল পরিবারের চার প্রাণহানি

মধ্যপ্রদেশের জবলপুর জেলায় একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্যাটেল পরিবারের চার সদস্যের প্রাণহানি ঘটেছে, যখন তাঁদের এসইউভি একটি সেতুর রেলিং ভেঙে ৩০ ফুট নিচে শুকনো নদীতে পড়ে যায়। দুর্ঘটনায় আরও দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন। আশ্চর্যজনকভাবে, গাড়িতে থাকা একটি ছাগল, যাকে পরিবার কোরবানির জন্য নিয়ে যাচ্ছিল, এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছে।
কী ঘটেছিল সেদিন?
ঘটনাটি ঘটে চরগাওয়ান-জবলপুর সড়কে, জেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে, বিকেল ৩:৩০ থেকে ৪:০০ নাগাদ। প্যাটেল পরিবারের ছয় সদস্য নরসিংহপুরের দাদা দরবারে পূজা ও প্রতীকী কোরবানি সম্পন্ন করে জবলপুরে ফিরছিলেন। গাড়িতে ছিলেন কিষাণ প্যাটেল (৩৫), মহেন্দ্র প্যাটেল (৩৫), সাগর প্যাটেল (১৭), রাজেন্দ্র প্যাটেল (৩৬), জিতেন্দ্র প্যাটেল (৩৬) এবং মনোজ প্রতাপ (৩৫), সঙ্গে একটি ছাগল ও একটি মোরগ। পরিবারের পরিকল্পনা ছিল বাড়ি ফিরে মুরগি ও খাসির মাংসের ভোজের আয়োজন করা।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত অনুসারে, অতিরিক্ত গতির কারণে চালক নিয়ন্ত্রণ হারান, ফলে এসইউভিটি সেতুর রেলিং ভেঙে শুকনো নদীর তলদেশে আছড়ে পড়ে। “গাড়ির গতি এতটাই বেশি ছিল যে রেলিং ভাঙার পর তা সরাসরি নিচে পড়ে যায়। এটি একটি ভয়াবহ দৃশ্য ছিল,” বলেন চরগাওয়ান থানার ইনচার্জ অজয় সিং। দুর্ঘটনার বিকট শব্দে কাছাকাছি গ্রামবাসীরা ছুটে আসেন এবং পুলিশকে খবর দেন।
উদ্ধার ও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ
চরগাওয়ান থানার পুলিশ দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে গ্রামবাসীদের সহায়তায় উদ্ধার কাজ শুরু করে। গাড়ির ধ্বংসাবশেষ থেকে চারজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়—কিষাণ, মহেন্দ্র, সাগর এবং রাজেন্দ্র। আহত জিতেন্দ্র এবং মনোজকে তাৎক্ষণিকভাবে জবলপুরের সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। “আহতদের অবস্থা গুরুতর, তবে স্থিতিশীল। তাঁরা এখনও বিবৃতি দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই,” জানান হাসপাতালের এক চিকিৎসক।
ঘটনাস্থলে উদ্ধার হওয়া ছাগলটির কানে সামান্য আঘাত লাগলেও তা বেঁচে যায়, যদিও মোরগটি মারা যায়। “ছাগলটি গাড়ির ধ্বংসাবশেষ থেকে বেরিয়ে এসে দাঁড়িয়েছিল। এটি প্রায় অলৌকিক মনে হয়েছিল,” বলেন একজন প্রত্যক্ষদর্শী গ্রামবাসী, রামেশ্বর যাদব।
তদন্তের অগ্রগতি
পুলিশ একটি মামলা দায়ের করেছে এবং দুর্ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত শুরু করেছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং আহতদের বক্তব্যের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। “আমরা প্রাথমিকভাবে অতিরিক্ত গতিকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছি। তবে, সেতুর রেলিংয়ের গুণগত মান এবং রাস্তার অবস্থাও পরীক্ষা করা হচ্ছে,” জানান পুলিশ কর্মকর্তা সিং। তিনি আরও বলেন, নিহতদের পরিবারকে ঘটনার বিষয়ে জানানো হয়েছে এবং তাঁদের সহায়তার জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
নিহত ও আহতরা সকলেই জবলপুরের চৌকিতাল গ্রামের বাসিন্দা। পরিবারের এই ক্ষতি গ্রামে শোকের ছায়া ফেলেছে। “প্যাটেল পরিবার আমাদের গ্রামের একটি সম্মানিত পরিবার। এই ঘটনা আমাদের সকলকে স্তব্ধ করে দিয়েছে,” বলেন গ্রামের প্রধান রঘুবীর প্যাটেল।
বিশ্লেষণ: সড়ক নিরাপত্তার প্রশ্ন
এই দুর্ঘটনা ভারতের গ্রামীণ সড়কগুলোর নিরাপত্তার মান নিয়ে ফের প্রশ্ন তুলেছে। “মধ্যপ্রদেশের অনেক সড়কে পর্যাপ্ত রেলিং বা সতর্কতামূলক চিহ্ন নেই। এছাড়া, অতিরিক্ত গতি এবং চালকের অসতর্কতা প্রায়ই এমন দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়,” বলেন সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অমিত শর্মা। তিনি আরও যোগ করেন, “এই ধরনের ঘটনা কেবল পরিবারের জন্যই নয়, সমাজের জন্যও একটি বড় ক্ষতি। সড়ক নিরাপত্তা শিক্ষা এবং অবকাঠামোগত উন্নতি এখন জরুরি।”
ভারতের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ১.৫ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যার একটি বড় অংশ গ্রামীণ এলাকায়। জবলপুরের এই ঘটনা সেই পরিসংখ্যানের একটি জীবন্ত উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।