১৫৬ দিনের লড়াইয়ে জয়, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে জামিন দিল বাংলাদেশ হাইকোর্ট

১৫৬ দিনের লড়াইয়ে জয়, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে জামিন দিল বাংলাদেশ হাইকোর্ট

১৫৬ দিনের কারাবাসের পর বাংলাদেশের বিশিষ্ট হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস অবশেষে জামিন পেয়েছেন। বুধবার বাংলাদেশ হাইকোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। দেশদ্রোহের অভিযোগে গত ২৫ নভেম্বর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার হওয়া দাসের এই জামিন কেবল এক ব্যক্তির জয় নয়, বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের ন্যায় ও নিরাপত্তার দাবির প্রতীকও। “এই রায় সত্যের জয় এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের আশার প্রতিফলন,” বলেন দাসের আইনজীবী অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য। তবে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এই রায়ে স্থগিতাদেশ দিতে পারে, যা এখনও অনিশ্চয়তা বজায় রেখেছে।

চিন্ময় দাস, যিনি বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র এবং পূর্বে ইসকনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে তিনি এক হিন্দু সমাবেশে জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছেন। এই অভিযোগকে ভারত ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে সমালোচনা করে। দাস দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর হামলার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তাঁর গ্রেপ্তারির পর ভারত ও বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়। “এই গ্রেপ্তারি ছিল হিন্দুদের কণ্ঠরোধের প্রচেষ্টা,” বলেন কলকাতার হিন্দু সংগঠনের নেতা প্রদীপ মজুমদার।

ইউনুস সরকারের অধীনে দাসের জামিন আবেদন বারবার খারিজ হয়েছিল। জেলে তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি এবং চিকিৎসার অভাব নিয়ে অভিযোগ ওঠে। তাঁর আইনজীবীরা আদালতে প্রমাণ করেন যে অভিযোগগুলো রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে উদ্ভূত। ভারত সরকার এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তার দাবি জানায়। গত কয়েক মাসে দেশের ৫০টিরও বেশি জেলায় হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে উত্তেজনা বাড়িয়েছে।

দাসের জামিন বাংলাদেশের ১৭ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ৮ শতাংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য আশার আলো। তবে, বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইউনুস সরকারের নীতি এবং সংখ্যালঘু নিরাপত্তার প্রশ্ন দুই দেশের সম্পর্ককে আরও জটিল করতে পারে। দাসের মুক্তি এখন সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে, এবং তাঁর সমর্থকরা এই লড়াইয়ে ন্যায়ের প্রত্যাশায় রয়েছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *