বছরের পর বছর দাবির পর জাতি জনগণনার অনুমোদন, বদলাবে ভারতের রাজনীতি

স্বাধীন ভারতে প্রথমবারের মতো জাতি জনগণনার ঘোষণা এসেছে। বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ক্যাবিনেট কমিটি অন ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স (CCEA)-এর বৈঠকে এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, “সাধারণ জনগণনার সঙ্গে জাতি জনগণনাও করা হবে।” তিনি কংগ্রেসের উপর অভিযোগ তুলে বলেন, “কংগ্রেস ও তাদের মিত্ররা এই ইস্যুকে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে।” এই সিদ্ধান্তকে বিশ্লেষকরা বিরোধীদের উপর একটি বড় রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছেন, বিশেষ করে বিহারের আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে।
জাতি জনগণনার দাবি দীর্ঘদিনের, এবং এটি এখন সমস্ত রাজনৈতিক দলকে এক মঞ্চে নিয়ে এসেছে। কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী গত তিন-চার বছর ধরে এটিকে ‘দেশের এক্স-রে’ বলে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে আসছেন। তিনি এক্স-এ লিখেছেন, “বলেছিলাম, মোদীজিকে জাতি জনগণনা করতেই হবে। এটি স্পষ্ট করবে কোন সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠান ও ক্ষমতায় কতটা অংশগ্রহণ রয়েছে।” স্বাধীনতার আগে ১৯৩১ সালে সর্বশেষ জাতি জনগণনা হয়েছিল। তবে, ১৯৫১ সালে জওহরলাল নেহরুর সরকার এটি বন্ধ করে দেয়, এই ভয়ে যে জাতিগত বিভাজন বাড়তে পারে। ১৯৬১ সালে রাজ্যগুলিকে নিজেদের স্তরে ওবিসি তালিকা তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়।
জাতি জনগণনা রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে ওঠার পিছনে আরক্ষণ নীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৮০ সালে মণ্ডল কমিশনের ২৭% ওবিসি আরক্ষণের সুপারিশ এটিকে জাতীয় আলোচনায় নিয়ে আসে। ২০১১ সালে ইউপিএ সরকারের সামাজিক-অর্থনৈতিক ও জাতি জনগণনা (SECC) ছিল একটি প্রচেষ্টা, কিন্তু তথ্য প্রকাশ না হওয়ায় সমালোচনা হয়। বিরোধী দলগুলো, বিশেষ করে কংগ্রেস, সপা ও আরজেডি, এই ইস্যুতে সরকারকে চাপ দিয়ে আসছিল।
জাতীয় জনগণনার অভাবে বিহার, তেলেঙ্গানা ও কর্নাটকের মতো রাজ্যগুলো নিজেদের জাতি জরিপ করেছে। ২০২৩ সালে বিহারের জরিপের ভিত্তিতে আরক্ষণ বাড়ানো হলেও, আদালতের হস্তক্ষেপে তা স্থগিত হয়। এই জনগণনার তথ্য ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ প্রকাশিত হতে পারে, যা কল্যাণমূলক প্রকল্প ও আরক্ষণ নীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।