মানবাধিকারে ভারতের পতন, রাষ্ট্রসঙ্ঘের তালিকায় প্রথমবার গ্রেড হ্রাস

নয়াদিল্লি: ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (এনএইচআরসি) রাজনৈতিক প্রভাবে কাজ করছে এবং বিরোধী কণ্ঠ দমনের অভিযোগে নীরব থাকছে—এমনই গুরুতর অভিযোগ তুলেছে রাষ্ট্রসঙ্ঘের অঙ্গ সংগঠন গ্লোবাল অ্যালায়েন্স অফ ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ইনস্টিটিউশনস (জিএএনএইচআরআই)। এই সংস্থা, যারা বিশ্বের মানবাধিকার কমিশনগুলোর স্বীকৃতি মূল্যায়ন করে, ভারতের এনএইচআরসি-র মর্যাদা ‘এ’ থেকে ‘বি’ গ্রেডে নামিয়ে দিয়েছে। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম এমন পতন ঘটল, যা আন্তর্জাতিক নীতি লঙ্ঘনের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। জিএএনএইচআরআই-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, কমিশনের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা বজায় রাখা হচ্ছে না, এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
রিপোর্টে উল্লেখ, ভারতে মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা সত্ত্বেও কমিশন নীরব থেকেছে, তাঁদের ন্যূনতম সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে পুলিশ কর্মকর্তাদেরই নিয়োগ করা হয়েছে, যা নিরপেক্ষতার প্রশ্ন তুলেছে। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্বের অভিযোগেও কমিশন নিষ্ক্রিয়। গত মার্চে জিএএনএইচআরআই-এর ৪৫তম অধিবেশনে এই গ্রেড হ্রাসের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, কমিশনের সদস্য নির্বাচনে বৈচিত্র্য ও বহুত্ববাদের নীতি মানা হয়নি। মাত্র একজন মহিলা সদস্য রয়েছেন, এবং একাধিক পদ শূন্য থাকলেও পূরণ করা হচ্ছে না। কমিশনের দাবি, তাদের ৩৩৯ কর্মীর মধ্যে ৯৩ জন মহিলা, কিন্তু জিএএনএইচআরআই এটিকে অপর্যাপ্ত বলেছে।
মোদি সরকারের আমলে কেন্দ্রীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর রাজনীতিকরণের অভিযোগ বারবার উঠেছে। গত বছর ডিসেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি ভি রামাসুব্রহ্মণ্যমকে এনএইচআরসি-র চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। তাঁর নির্বাচনের বিরোধিতা করেছিলেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী ও রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে। তাঁরা বলেছিলেন, “শুধুমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নির্বাচন হয়েছে, দেশের বৈচিত্র্য উপেক্ষিত হয়েছে।” রাষ্ট্রসঙ্ঘের রিপোর্টে এই উদ্বেগ প্রতিফলিত হয়েছে। মানবাধিকার কর্মীদের একাংশের পরামর্শ, কমিশনের স্বচ্ছতা প্রমাণে এই রিপোর্ট তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা উচিত।
২০২৩ থেকে এনএইচআরসি-র কার্যকলাপ নিবিড় নজরদারিতে ছিল, এবং দুই বছর গ্রেড দেওয়া হয়নি। এবার গ্রেড হ্রাসের সিদ্ধান্ত হলেও, ২০২৬ পর্যন্ত ‘এ’ গ্রেড বহাল থাকবে। এই সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও প্রমাণ দিয়ে কমিশন আবার ‘এ’ গ্রেড ফিরে পেতে পারে। তবে, এই ঘটনা ভারতের মানবাধিকার রেকর্ডের উপর আন্তর্জাতিক মঞ্চে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে, যা দেশের গণতান্ত্রিক ইমেজের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।