আমেরিকা-সৌদি আরবের ১৪২ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড প্রতিরক্ষা চুক্তি: কেন এই পদক্ষেপ?

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বর্তমানে সৌদি আরব সফরে রয়েছেন, এবং তাঁর সঙ্গে রয়েছেন টেসলার প্রধান এলন মাস্ক। এই সফরে সৌদি আরবের সঙ্গে আমেরিকা ১৪২ বিলিয়ন ডলারের ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় চুক্তি। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, সৌদি আরব আমেরিকায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই চুক্তিতে আমেরিকার ১২টির বেশি কো ম্পা নি সৌদি আরবকে অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সামরিক পরিষেবা সরবরাহ করবে।
চুক্তির কারণ:
এই চুক্তির মূল লক্ষ্য হল মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলা করা। সৌদি আরব আমেরিকার দীর্ঘদিনের কৌশলগত মিত্র এবং এই অঞ্চলে ইরানের বিরুদ্ধে ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের ইরান-সমর্থিত হামলার প্রেক্ষিতে সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এই চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ। চুক্তিতে জেনারেল অ্যাটমিক্সের MQ-9B সিগার্ডিয়ান ড্রোন, লকহিড মার্টিনের C-130 পরিবহন বিমান, রেথিয়নের প্যাট্রিয়ট মিসাইল সিস্টেম এবং অন্যান্য অত্যাধুনিক রাডার ও মিসাইল সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ট্রাম্পের কৌশল ও অর্থনৈতিক সুবিধা:
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তিনি সৌদি আরবের সঙ্গে ১১০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তির জন্য উৎসাহিত করেছিলেন, যা আমেরিকার অর্থনীতির জন্য চাকরি সৃষ্টির দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই নতুন চুক্তিও আমেরিকার প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য লাভজনক, যেখানে লকহিড মার্টিন, রেথিয়ন (RTX), বোয়িং, নর্থরপ গ্রুম্যান এবং জেনারেল অ্যাটমিক্সের মতো কো ম্পা নি উপকৃত হবে। এছাড়া, সৌদি আরবের ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি আমেরিকার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং শক্তি খাতে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করবে।
পাকিস্তানের পরিবর্তে সৌদি কেন?
পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক উত্তেজনা, বিশেষ করে অপারেশন সিন্দুরের পর, আমেরিকার নিরাপত্তা নীতিতে সৌদি আরবকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জটিল হয়ে উঠেছে, কারণ ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অন্যদিকে, সৌদি আরব আমেরিকার নির্ভরযোগ্য মিত্র এবং তেল রপ্তানির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এই চুক্তি সৌদি আরবের নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি আমেরিকার ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্যকে সমর্থন করে।
ট্রাম্পের সফর ও ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে বৈঠক:
ট্রাম্প সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের চার দিনের সফরে রয়েছেন, যা তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম কূটনৈতিক সফর। তিনি সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, যেখানে প্রতিরক্ষা চুক্তি ছাড়াও AI এবং শক্তি খাতে বিনিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এই সফর আমেরিকা-সৌদি সম্পর্ককে আরও জোরদার করেছে।
ট্রাম্পের ব্যবসায়িক পটভূমি:
ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি একজন সফল ব্যবসায়ী। তাঁর ব্যবসা ২৫টি দেশে ১৪৪টি কো ম্পা নির মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যার মধ্যে ভারতে ১৬টি কো ম্পা নি রয়েছে। তাঁর প্রধান ব্যবসা, দ্য ট্রাম্প অর্গানাইজেশন, রিয়েল এস্টেট, আতিথেয়তা, বিনোদন এবং মিডিয়া খাতে কাজ করে। এই ব্যবসায়িক দক্ষতা তাঁর কূটনৈতিক পদক্ষেপে প্রভাব ফেলে।