নয়া দিল্লি: দিল্লি ক্যাপিটালস (ডিসি) ১৪ মে, ২০২৫-এ জেক ফ্রেজার-ম্যাকগার্কের বদলি হিসেবে বাংলাদেশি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানকে দলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত ক্রিকেটের মাঠ ছাড়িয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এক্স-এ #BoycottDelhiCapitals হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করছে, যেখানে ভক্তরা বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ডিসি’র এই পদক্ষেপকে “লজ্জাজনক” বলে সমালোচনা করছেন। মুস্তাফিজুর, যিনি ২০২২ ও ২০২৩ সালে ডিসি’র হয়ে খেলেছেন, তিনি আইপিএল ২০২৫-এর বাকি তিনটি লিগ ম্যাচ এবং প্লে-অফে (যদি দলটি কোয়ালিফাই করে) দলকে সহায়তা করার কথা ছিল।
বিতর্কের মূল কারণ:
এক্স-এ ভক্তদের মতে, বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতন, মন্দির ধ্বংস এবং ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২,০০০-এর বেশি হিন্দু-বিরোধী সহিংসতার ঘটনা ডিসি’র এই সিদ্ধান্তকে অগ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “বাংলাদেশে হিন্দুদের হত্যা করা হচ্ছে, মন্দির ভাঙা হচ্ছে, আর ডিসি বাংলাদেশি খেলোয়াড়কে স্বাগত জানাচ্ছে?” আরেকজন দাবি করেছেন, “নিলামে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি বাংলাদেশি খেলোয়াড় নেয়নি, তাহলে ডিসি কেন এমন করল?” কিছু পোস্টে বাংলাদেশের কথিত পাকিস্তান-সমর্থিত অবস্থান এবং ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রেক্ষিতে এই নিয়োগকে “ভারত-বিরোধী” বলা হয়েছে। তবে, এই অভিযোগগুলো অপ্রমাণিত এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দীপিত হতে পারে।
মুস্তাফিজুরের অংশগ্রহণে অনিশ্চয়তা:
মুস্তাফিজুরের আইপিএল অংশগ্রহণ নিয়ে আরেকটি জটিলতা রয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) জানিয়েছে, তারা মুস্তাফিজুরের জন্য কোনো নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) পায়নি। বিসিবি’র সিইও নিজামুদ্দিন চৌধুরী বলেন, “মুস্তাফিজুর ইউএই সফরে দলের সঙ্গে যাচ্ছেন। আমরা আইপিএল বা মুস্তাফিজুরের কাছ থেকে কোনো যোগাযোগ পাইনি।” মুস্তাফিজুর ১৪ মে এক্স-এ পোস্ট করে নিশ্চিত করেছেন যে তিনি ইউএই-তে দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে যাচ্ছেন।

ইউএই-তে বাংলাদেশের ম্যাচ ১৭ ও ১৯ মে, যা ডিসি’র ১৮ মে গুজরাট টাইটান্সের বিরুদ্ধে ম্যাচের সঙ্গে সংঘর্ষে। এরপর বাংলাদেশ ২৫ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত পাকিস্তানে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ খেলবে, যা আইপিএল প্লে-অফের সময়ের সঙ্গে মিলে যায়। ফলে, মুস্তাফিজুর সম্ভবত ডিসি’র ১৮ মে’র ম্যাচ মিস করবেন এবং ২১ মে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে ম্যাচের জন্য প্রস্তুতির সময় পাবেন না।

ক্রিকেটীয় প্রেক্ষাপট:
মুস্তাফিজুরের নিয়োগ ক্রিকেটীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যৌক্তিক। তিনি আইপিএলে ৫৭ ম্যাচে ৬১ উইকেট নিয়েছেন (ইকোনমি ৭.৮৪), এবং ২০২৪ সালে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে ৯ ম্যাচে ১৪ উইকেট নিয়েছিলেন। ডিসি’র পেস আক্রমণে মিচেল স্টার্কের সম্ভাব্য অনুপস্থিতি এবং টি নটরাজন ও মোহিত শর্মার উপর নির্ভরতার কারণে মুস্তাফিজুরের অভিজ্ঞতা দলের জন্য মূল্যবান হতে পারত। তবে, বিসিবি’র এনওসি না দেওয়া এবং ভক্তদের তীব্র প্রতিক্রিয়া এই পরিকল্পনাকে জটিল করেছে।

আইপিএলের প্রেক্ষাপট:
আইপিএল ২০২৫ ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনার কারণে ৯ মে স্থগিত হয়েছিল এবং ১৭ মে থেকে পুনরায় শুরু হবে। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে অস্থায়ী বদলি খেলোয়াড় নিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, এবং ডিসি এই নিয়মের অধীনে মুস্তাফিজুরকে সই করেছে। জেক ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক ধর্মশালায় নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে আইপিএল থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন, যেখানে ৮ মে পাঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে ডিসি’র ম্যাচ মাঝপথে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

বিশ্লেষণ:
মুস্তাফিজুরের নিয়োগ ক্রিকেটীয়ভাবে সমর্থনযোগ্য হলেও, বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের অভিযোগ এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের সংবেদনশীল প্রেক্ষাপট এটিকে বিতর্কিত করেছে। এক্স-এ ভক্তদের ক্ষোভ রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক ইস্যুর সঙ্গে মিশে জাতীয়তাবাদী আবেগকে উসকে দিয়েছে। বিসিবি’র এনওসি ইস্যু এবং মুস্তাফিজুরের জাতীয় দায়িত্বের সময়সূচী তার অংশগ্রহণকে প্রায় আসাম্ভব করে তুলেছে। ডিসি এখনও এই বিতর্কের জবাব দেয়নি, তবে ভক্তদের প্রতিক্রিয়া এবং মুস্তাফিজুরের অনুপলব্ধতার কারণে দলটি সম্ভবত অন্য বদলি খেলোয়াড়ের দিকে এগোবে। এই ঘটনা ক্রিকেটে রাজনীতি ও সামাজিক আবেগের প্রভাবের একটি জটিল উদাহরণ হয়ে থাকবে।