আর্মেনিয়ান গণহত্যা ও তুরস্কের অস্বীকার, বিশ্বমঞ্চে বিতর্ক আজও অব্যাহত

আর্মেনিয়ান গণহত্যা ও তুরস্কের অস্বীকার, বিশ্বমঞ্চে বিতর্ক আজও অব্যাহত

যখনই তুরস্ক সংবাদ শিরোনামে উঠে আসে, তখনই আর্মেনিয়ান গণহত্যার ভয়াবহ স্মৃতি ফের আলোচনায় আসে। ভারত-তুরস্ক কূটনৈতিক উত্তেজনার মাঝেও “বয়কট তুরস্ক” জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, আর এই অতীতের এক কালো অধ্যায় আবারও মনোযোগের কেন্দ্রে এসেছে। ১৯১৫ থেকে ১৯১৭ সালের মধ্যে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন আর্মেনিয়ান নাগরিক নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। অনেককে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়, অনেকে মরুভূমির দীর্ঘ যাত্রায় বাধ্য করা হয় যেখানে অনেকে ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় প্রাণ হারিয়েছিল।

এই গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি গত কয়েক বছর ধরেই তীব্র বিতর্কের বিষয়। ২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অধীনে আর্মেনিয়ান গণহত্যাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়, যা তুরস্কের রোষের কারণ হয়েছিল। এটি ছিল ২০শ শতাব্দীর হোলোকাস্টের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম গণহত্যা। তুরস্ক এই হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা বলে অস্বীকার করে আসছে। যদিও তারা স্বীকার করে যে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল, তবে তা গণহত্যা বা পরিকল্পিত হত্যার মতো কিছু নয় বলে দাবি করে।

১৯১৫ সালের ২৪ এপ্রিল আর্মেনিয়ান বুদ্ধিজীবী ও সমাজ নেতাদের গ্রেপ্তার ও হত্যা দিয়ে গণহত্যার সূচনা হয়। এরপর নারী, শিশু এবং প্রবীণসহ প্রায় এক মিলিয়নেরও বেশি আর্মেনিয়ান খ্রিস্টান নির্যাতিত হন। লুটপাট, গণধর্ষণ এবং খাদ্য ও পানীয় ছাড়াই মরুভূমিতে ফেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এই হত্যাকাণ্ড আধুনিক ইতিহাসে দ্বিতীয় বৃহত্তম গণহত্যা হিসেবে বিবেচিত।

১৯ শতকের শেষ ভাগ থেকে ২০ শতকের শুরুতে, ওসমানীয় সাম্রাজ্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল, যেখানে আর্মেনিয়ানরা অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে শক্তিশালী একটি সংখ্যালঘু গোষ্ঠী ছিল। জাতীয়তাবাদী আবেগ বাড়ার সঙ্গে তাদের প্রতি অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়। ওসমানীয় শাসকরা বিশ্বযুদ্ধের সময় আর্মেনিয়ানদের সোভিয়েত রাশিয়ার পক্ষ নিয়ে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে সন্দেহ করেছিল, যা গণহত্যার অজুহাত হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অন্তত ৩০টির বেশি দেশ এই গণহত্যাকে স্বীকৃতি দিয়েছে, তবে তুরস্ক তা অস্বীকার করে আসছে। ভারত এখনও এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেনি, তবে তুরস্কের পাকিস্তানের পাশে অবস্থান গ্রহণ ও সামরিক সহায়তা প্রদানের খবর ভারতীয় জনমতকে তীব্রভাবে ক্ষুব্ধ করেছে।

আর্মেনিয়া আজ একটি স্বাধীন শান্তিপূর্ণ দেশ। ১৯৯০ সালে এটি সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে এবং ১৯৯১ সালে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়। এর রাজধানী ইরেভান। আর্মেনিয়া আজ একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্র এবং ২০শ শতাব্দীর এক অন্ধকার অধ্যায়ের স্মৃতিচিহ্ন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *