তুরস্কের কারণেই কি ভারত হল ব্রিটিশদের উপনিবেশ? ইতিহাসের অজানা কাহিনি

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্তে উত্তেজনা বাড়ার সময় তুরস্ক (বর্তমানে তুর্কিয়ে) এক নতুন ভূমিকায় আবির্ভূত হয়েছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তুরস্কের অস্ত্র ব্যবহার করছিল, যার জেরে তুরস্কের বিরুদ্ধে বয়কট শুরু হয়। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় ফিরে গেলে দেখা যায়, তুরস্ক না থাকলে ভারত হয়তো ব্রিটিশদের গোলামই হত না। তুরস্ক বারবার বিশ্বের অর্থনীতি ও রাজনীতিকে বদলে দিয়েছে।
তুরস্কের বিশ্ব-বদলের গল্প
এই গল্প প্রায় ৬০০ বছরের পুরোনো, মে মাসের। ১৪৫৩ সালে আজকের ইস্তানবুল (তুর্কিয়ের রাজধানী) অটোমান সাম্রাজ্যের দখলে আসে। এর আগে এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে অবস্থিত এই শহর ছিল কনস্টান্টিনোপল, যেখানে ১৫০০ বছর ধরে রোমান সাম্রাজ্যের শাসন ছিল। এই ক্ষমতার পরিবর্তন বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ধারাকে বদলে দেয়। অটোমানরা ইউরোপ-এশিয়ার মধ্যে স্থলপথের বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়। ভারতের মশলা, বিশেষ করে কালো মরিচ, এবং ঢাকার মসলিন কাপড় তখন ইউরোপে বিলাসবহুল পণ্য হিসেবে বিক্রি হত। এই পথ বন্ধ হওয়ায় বাণিজ্য স্তব্ধ হয়ে যায়, চীনের সিল্ক রুটও প্রভাবিত হয়।
নতুন পথের খোঁজ, আমেরিকার আবিষ্কার
এই ঘটনার পর ইউরোপে নতুন বাণিজ্য পথের খোঁজ শুরু হয়। স্পেন, ফ্রান্স, ব্রিটেন, পর্তুগালের নাবিকরা ভারতের সমুদ্রপথ খুঁজতে বের হন। ক্রিস্টোফার কলম্বাস ভারতের পথ খুঁজতে গিয়ে ভুল করে ১৪৯২ সালে আমেরিকা আবিষ্কার করেন। অন্যদিকে, পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো দি গামা আফ্রিকার উপকূল ধরে ‘কেপ অফ গুড হোপ’ পেরিয়ে ভারতের কালিকটে পৌঁছান। এই পথ নিরাপদ ছিল। পরবর্তী ১০০ বছর পর্তুগিজ ও ডাচরা ভারত থেকে মশলা ও কাপড়ের বাণিজ্যে প্রচুর লাভ করে। ভারতও সোনায় মুড়ে যায়, কারণ কালো মরিচ ও মসলিনের বিনিময়ে ইউরোপ থেকে প্রচুর সোনা আসত।
ব্রিটিশদের গোলামি
১৬০০ সালে ব্রিটিশরা ভারতে পা রাখে, তারপর ফরাসি ও ডেনিশরাও আসে। ভারতের বাণিজ্যে আধিপত্যের জন্য যুদ্ধ হয়। ব্রিটিশরা তাদের অস্ত্রের জোরে বেশিরভাগ জায়গায় জয়ী হয়। ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ ব্রিটিশদের ভারতে পায়ের জমি শক্ত করে। ১৭৬৪ সালের বক্সারের যুদ্ধ ভারতের ইতিহাস বদলে দেয়, এবং ধীরে ধীরে ভারত ব্রিটিশদের গোলাম হয়ে যায়।