ফুটবল তারকা রোনাল্ডোর দেশে কেন টিকছে না সরকার? তিন বছরে তৃতীয় নির্বাচন

ফুটবলের মাঠে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো পর্তুগালকে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি এনে দিয়েছেন, কিন্তু তাঁর দেশের রাজনৈতিক চিত্র ক্রমশ ঝাপসা হয়ে পড়ছে। তিন বছরে তৃতীয়বারের মতো পর্তুগালের জনগণ আগামী রবিবার, ১৮ মে, নতুন সরকার বেছে নিতে ভোট দিতে যাচ্ছেন। বারবার নির্বাচন ও অস্থির সরকারের কারণে জনগণের আস্থা টলে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী লুইস মন্টিনেগ্রোর সরকারের পতন এই অস্থিরতার সর্বশেষ উদাহরণ। তিনি নিজেই সংসদে আস্থা ভোটের প্রস্তাব আনেন, কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে তা ব্যর্থ হয়। তাঁর পারিবারিক ডেটা প্রোটেকশন কনসালটেন্সি ফার্ম ‘স্পিনুমভিভা’র কার্যকলাপ নিয়ে বিতর্কের জেরে রাষ্ট্রপতি মার্সেলো রেবেলো দি সোসা সংসদ ভেঙে নতুন নির্বাচনের ঘোষণা দেন। মন্টিনেগ্রো অবশ্য কোনো অনৈতিক কাজের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
গত নির্বাচনে মন্টিনেগ্রোর ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এডি) ২৯% ভোট ও ২৩০ আসনের মধ্যে ৮০টি আসন পেয়েছিল। সাম্প্রতিক জরিপে তারা ৩২% ভোট নিয়ে এগিয়ে থাকলেও পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ১১৬ আসন থেকে এখনও পিছিয়ে। সেন্টার-লেফট সোশ্যালিস্ট পার্টি ২৭% এবং ফার-রাইট চেগা পার্টি ১৭% ভোটে রয়েছে। লিবারেল ইনিশিয়েটিভ ৬% ভোট পেলেও, কোনো জোটই স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না। ২০২৪ সালে রেকর্ড ৬৪.৭ মিলিয়ন ভোটার ভোট দিয়েছিলেন, কিন্তু এবার ভোটার উপস্থিতি কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, কারণ জনগণ বারবার নির্বাচনে ক্লান্ত। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে লিথিয়াম খনন ও ট্যাপ এয়ারলাইনের নিজীকরণের মতো বড় প্রকল্প ঝুলে রয়েছে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও পর্তুগাল মুখোমুখি হচ্ছে একাধিক চ্যালেঞ্জের। ২০২৪ সালে ১.৯% প্রবৃদ্ধি এবং ২০২৫ সালে ২% এর বেশি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস থাকলেও, চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে জিডিপি ০.৫% কমেছে। স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে; হাসপাতালে কর্মী সংকট, ধর্মঘট এবং চিকিৎসার জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষা জনগণের অসন্তোষ বাড়াচ্ছে। আবাসন সংকট আরেকটি বড় সমস্যা। পর্যটন বুমের জেরে ২০২৩ সালে বাড়ির দাম ৯% বেড়েছে, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের গড়ের তিনগুণ। গড় মাসিক বেতন ২,০০০ ইউরোর কম, যেখানে ইউরোপের গড় ৩,১৫৫ ইউরো। এছাড়া, প্রায় ১৫ লাখ প্রবাসী, যারা জনসংখ্যার ১৪%, বিশেষ করে এশীয় প্রবাসীদের নিয়ে কিছু অঞ্চলে বিরোধিতা বাড়ছে, যা চেগাকে উৎসাহ দিচ্ছে।