করোনার প্রত্যাবর্তন: এশিয়ায় বাড়ছে সংক্রমণ, হাসপাতালে ভর্তির হার বৃদ্ধি

২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে তাণ্ডব চালানো করোনাভাইরাস এখন প্যানডেমিক থেকে এনডেমিকে রূপান্তরিত হয়েছে। এটি পুরোপুরি নির্মূল হওয়ার সম্ভাবনা নেই, এবং মানুষকে অন্যান্য সংক্রামক রোগের মতো এর সঙ্গে বাঁচতে শিখতে হবে। যারা মনে করছেন করোনা এখন অতীত, তাদের জন্য সাম্প্রতিক পরিস্থিতি একটি সতর্কতার ঘণ্টা। হংকং থেকে সিঙ্গাপুর পর্যন্ত করোনার নতুন ঢেউ শুরু হয়েছে, যা এশিয়ায় উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। হংকংয়ে গত ৩ মে শেষ হওয়া সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু এবং সিঙ্গাপুরে ২৮% কেস বৃদ্ধির রিপোর্ট এই ঢেউয়ের তীব্রতা প্রকাশ করে। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ সতর্কতা জারি করে কোভিড নির্দেশিকা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে।
হংকংয়ে করোনার কার্যকলাপ “অত্যন্ত উচ্চ” বলে জানিয়েছেন সেন্টার ফর হেলথ প্রোটেকশনের কমিউনিকেবল ডিজিজ শাখার প্রধান অ্যালবার্ট আউ। শ্বাসযন্ত্রের নমুনায় কোভিড পজিটিভের হার গত এক বছরে সর্বোচ্চ। নিকাশি জলেও ভাইরাসের উপস্থিতি এবং হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বৃদ্ধি সম্প্রদায়ের মধ্যে সংক্রমণের বিস্তার নির্দেশ করে। সিঙ্গাপুরে ২৭ এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত সপ্তাহে ১৪,২০০ কেস রিপোর্ট হয়েছে, যা আগের সপ্তাহের ১১,১০০ কেসের তুলনায় ২৮% বেশি। হাসপাতালে ভর্তির হারও ৩০% বেড়েছে, যদিও আইসিইউ কেস সামান্য কমেছে। সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বর্তমান ভ্যারিয়েন্টগুলো বেশি সংক্রামক বা মারাত্মক নয়, তবে জনগণের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস এই ঢেউয়ের কারণ।
করোনার নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট জেএন.১, যা ওমিক্রনের বি.এ.২.৮৬-এর বংশধর, এই ঢেউয়ের অন্যতম কারণ। এটি ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে প্রথম শনাক্ত হয় এবং সিঙ্গাপুর, চিন, আমেরিকা ও ইউরোপে ছড়িয়েছে। ভারতে জেএন.১-এর উপস্থিতি কেরল, গোয়া, গুজরাট সহ ১০টি রাজ্যে পাওয়া গেছে, তবে বর্তমানে মাত্র ৯৩টি সক্রিয় কেস রয়েছে, এবং কোনো নতুন ঢেউয়ের প্রমাণ নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, জেএন.১ বেশি সংক্রামক হলেও এটি মারাত্মক নয়।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা টিকাকরণের উপর জোর দিচ্ছেন, বিশেষ করে ৬০ বছরের বেশি বয়সী ও ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য। সিঙ্গাপুরে জেএন.১-এর বংশধর এলএফ.৭ এবং এনবি.১.৮ প্রধান ভ্যারিয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যা স্থানীয় কেসের দুই-তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে, তবে আতঙ্কের প্রয়োজন নেই। মুখোশ পরা, সামাজিক দূরত্ব এবং টিকাকরণই এই ঢেউ মোকাবিলার মূল অস্ত্র।