কান্সের রূপান্তর: মাছের গ্রাম থেকে ঐশ্বরিয়া-টম ক্রুজের রেড কার্পেট

ফ্রান্সের কান্স শহরে ১৩ মে থেকে শুরু হওয়া বিশ্বের অন্যতম বড় কান্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২৫ মে পর্যন্ত চলবে। গ্ল্যামার, বিলাসিতা আর রেড কার্পেটের জৌলুসে মোড়া এই উৎসব ভারতের ঐশ্বরিয়া রায় থেকে হলিউডের টম ক্রুজের মতো তারকাদের আকর্ষণের কেন্দ্র। কিন্তু জানেন কি, আজকের এই ঝলমলে কান্স একসময় ছিল মাছ ধরার একটি ছোট্ট গ্রাম? ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখা যায়, কীভাবে এই গ্রাম বিশ্বের গ্ল্যামারের রাজধানীতে রূপান্তরিত হল।
খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে লিগুরিয়ান অক্সিবি উপজাতি এজিটনা নামে একটি বসতি স্থাপন করে, যার নাম সম্ভবত সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে যুক্ত। পাশেই ছিল এটোলিয়ান শহর, যা মৎস্যচাষের জন্য বিখ্যাত ছিল। এই অঞ্চল লেরিন্স দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে একটি বন্দর হিসেবেও ব্যবহৃত হত। খ্রিস্টপূর্ব ১৫৪ সালে সংঘর্ষের পর এই অঞ্চল ক্রমে ক্যানুয়া নামে পরিচিত হয়, যা সম্ভবত গন্না জাতীয় উদ্ভিদ ক্যানা থেকে এসেছে। দশম শতাব্দীতে এটি লে সুকুয়েত পাহাড়ে রোমান প্রহরী চৌকিতে পরিণত হয়। ৮৯১ খ্রিস্টাব্দে সারাসেনদের আক্রমণে লেরিন্স দ্বীপপুঞ্জ পরিত্যক্ত হয়, আর বাসিন্দারা সুকুয়েতে চলে আসেন। ১০৩৫ সালে সুকুয়েতে কান্স নামে একটি প্রাসাদ নির্মিত হয়, যা থেকে শহরের উৎপত্তি।
১৮শ শতাব্দীতে স্পেন ও ব্রিটেনের আধিপত্যের চেষ্টা ব্যর্থ হয়, আর ১৯শ শতাব্দীতে ম্যারি ডি ল্যামেটস ও প্রিন্স চার্লস-৩-এর নেতৃত্বে কান্স আধুনিক শহরে রূপান্তরিত হয়। ক্যাসিনো, ভিলা, হোটল ও রেল নেটওয়ার্ক তৈরি হয়, প্যারিস থেকে দূরত্ব কমে ২৩ ঘণ্টায় নেমে আসে। ১৯৪৬ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কান্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল শুরু হয়, যা আজ বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছে। এর রেড কার্পেট, ৬০ মিটার দীর্ঘ ও ২৪টি সিঁড়িযুক্ত, দিনে তিনবার পরিবর্তিত হয়, যা তারকাদের ফটোশুটের জন্য নিখুঁত রাখা হয়।
এই ফেস্টিভ্যালে সেরা চলচ্চিত্র, অভিনেতা-অভিনেত্রী, পরিচালক ও জুরি পুরস্কার দেওয়া হয়। ঐশ্বরিয়া রায়ের মতো ভারতীয় তারকারা এখানে জৌলুস ছড়ান। কান্সের এই যাত্রা একটি মৎস্য গ্রাম থেকে বিশ্বের গ্ল্যামারের কেন্দ্র হয়ে ওঠার গল্প।