সিএজি রিপোর্টে উন্মোচিত মধ্যপ্রদেশে ১৩ জেলায় ২৩ কোটি টাকার ত্রাণ তছরুপ কেলেঙ্কারি

সিএজি রিপোর্টে উন্মোচিত মধ্যপ্রদেশে ১৩ জেলায় ২৩ কোটি টাকার ত্রাণ তছরুপ কেলেঙ্কারি

ভোপাল: মধ্যপ্রদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া ত্রাণ তহবিলে ২৩.৮১ কোটি টাকার তছরুপের ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে, যা রাজ্যের প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও দুর্নীতির পর্দা ফাঁস করেছে। কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি)-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ থেকে ২০২১-২২ সাল পর্যন্ত চারটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ত্রাণ প্রকল্পে সর্বাধিক আর্থিক সহায়তা বিতরণের সময় এই কেলেঙ্কারি ঘটে। অডিটে দেখা গেছে, সাপের কামড়, ডুবে মৃত্যু, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট এবং বন্যার মতো দুর্যোগের জন্য বরাদ্দ ত্রাণ তহবিল সরকারি কর্মচারী, তাদের আত্মীয় এবং অযোগ্য ব্যক্তিদের খাতায় স্থানান্তরিত হয়েছে।

২০২২ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরে সিএজি-এর অডিটে ১৩টি জেলায়—সিওনি, শিওপুর, সিহোর, শিবপুরী, দেওয়াস, ছতরপুর, খান্দওয়া, মন্দসৌর, রায়সেন, দমোহ, সতনা, আগর-মালওয়া এবং বিদিশায়—এই তছরুপ ধরা পড়ে। মোট ২৩.৮১ কোটি টাকার মধ্যে ২১.১৪ কোটি টাকা অযোগ্য ব্যক্তিদের এবং ২.৬৭ কোটি টাকা সরকারি কর্মচারী ও তাদের আত্মীয়দের খাতায় জমা হয়। সবচেয়ে বেশি তছরুপ হয়েছে সিওনি জেলায়, যেখানে ২৯১টি জাল স্বীকৃতি আদেশের মাধ্যমে ৫৯টি অযোগ্য অ্যাকাউন্টে ১১.৭৯ কোটি টাকা স্থানান্তরিত হয়। এরপর শিওপুরে ৩.৩৬ কোটি, শিবপুরীতে ৩ কোটি, দেওয়াসে ১.২৬ কোটি এবং সিহোরে ১.১৭ কোটি টাকার তছরুপ ধরা পড়ে।

সিওনি জেলায় এই কেলেঙ্কারির মূল হোতা হিসেবে সহকারী গ্রেড-৩ সচিন দহায়কের নাম উঠে এসেছে, যিনি তার পরিবার, বন্ধু ও পরিচিতদের অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, রমেশ নামে এক ব্যক্তিকে কাগজে ৩০ বার, দ্বারিকা বাইকে ২৯ বার এবং রাম কুমারকে ২৮ বার সাপের কামড়ে মৃত দেখানো হয়েছে, যেখানে প্রতিবার ৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেস প্রধান জিতু পাটোয়ারি এই ঘটনাকে ‘অভূতপূর্ব’ বলে সমালোচনা করেছেন, দাবি করেছেন যে মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদবের শাসনকালে এমন দুর্নীতি চলছে।

সিএজি রিপোর্টে বলা হয়েছে, গ্লোবাল বাজেট সিস্টেম এবং ইন্টিগ্রেটেড ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (আইএফএমআইএস)-এর ত্রুটির সুযোগ নিয়ে এই তছরুপ করা হয়েছে। সিওনি জেলায় চারজন সরকারি কর্মচারী, যার মধ্যে একজন তহসিলদার এবং একজন নায়েব তহসিলদার রয়েছেন, তাদের সাসপেন্ড করা হয়েছে, এবং একজনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। শিওপুরে ২০২১ সালের বন্যার জন্য বরাদ্দ ত্রাণ তহবিলও অপব্যবহার করা হয়। তদন্তে ড্রয়িং অ্যান্ড ডিসবার্সিং অফিসার (ডিডিও), ট্রেজারি অফিসার এবং অযোগ্য সুবিধাভোগীদের মধ্যে সম্ভাব্য যোগসাজশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সরকার একটি ম্যাজিস্ট্রিয়াল তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *