ভারত-পাক সিজফায়ার: ট্রাম্পের কৃতিত্ব দাবিতে প্রাক্তন মার্কিন এনএসএ-র কটাক্ষ

ওয়াশিংটন: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার (২১ মে, ২০২৫) দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সঙ্গে ওভাল অফিসে বৈঠকে পুনরায় দাবি করেন যে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাত বাণিজ্যের মাধ্যমে সমাধান করেছেন। ট্রাম্প বলেন, “আমরা পুরো বিষয়টি সামলে নিয়েছি, এবং আমি মনে করি বাণিজ্যের মাধ্যমে এটি সমাধান করেছি।” তিনি জানান, আমেরিকা ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের সঙ্গে বড় বাণিজ্য চুক্তি করছে, তবে দুই দিন পর কিছু ঘটনা ঘটলে তাকে দায়ী করা হয়, যা তিনি পছন্দ করেন না।
ট্রাম্প আরও বলেন, পাকিস্তানে কিছু দুর্দান্ত মানুষ ও নেতা রয়েছে, তবে ভারত তাদের বন্ধু। রামাফোসা উত্তরে বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একজন সাধারণ বন্ধু। এটি পঞ্চমবারের মতো ট্রাম্প ১০ মে থেকে ভারত-পাকিস্তান সিজফায়ারে আমেরিকার ভূমিকার দাবি করেছেন। তিনি এর আগে ১০ মে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করে বলেছিলেন যে আমেরিকার মধ্যস্থতায় এই সিজফায়ার সম্ভব হয়েছে।
ভারতের খণ্ডন ও প্রাক্তন মার্কিন এনএসএ-র কটাক্ষ
ভারত সরকার ট্রাম্পের দাবি খণ্ডন করে বলেছে, সিজফায়ারে বাণিজ্য বা আমেরিকার মধ্যস্থতার কোনো ভূমিকা ছিল না। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানান, ৭ মে অপারেশন সিন্দুর শুরুর পর মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও পররাষ্ট্রসচিব মার্কো রুবিওর সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল, তবে বাণিজ্যের বিষয় উঠেনি। সিজফায়ারটি ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনস (ডিজিএমও)-এর মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে হয়েছে।
প্রাক্তন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন ট্রাম্পের কৃতিত্ব দাবির বিষয়ে কটাক্ষ করে বলেন, “ট্রাম্পের সবকিছুর কৃতিত্ব নেওয়ার অভ্যাস। এটি ভারতের বিরুদ্ধে নয়, এটি কেবল ট্রাম্পের স্বভাব।” তিনি বলেন, ট্রাম্প সম্ভবত মোদির সঙ্গে কথা বলেছেন, তবে এটি অন্যান্য দেশের নেতাদের মতোই সাধারণ আলোচনা ছিল।
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার পটভূমি
২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পাহলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত ৭ মে অপারেশন সিন্দুরের মাধ্যমে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে নয়টি সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে হামলা চালায়। এরপর ৮-১০ মে পাকিস্তান ভারতীয় সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে পাল্টা হামলার চেষ্টা করে। চার দিন ধরে উভয় দেশের মধ্যে ড্রোন ও মিসাইল হামলা চলে। ১০ মে ভারত ও পাকিস্তানের ডিজিএমও-দের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে সিজফায়ার ঘোষণা করা হয়।
বাণিজ্য ও কাশ্মীর ইস্যুতে ট্রাম্পের প্রস্তাব
ট্রাম্প দাবি করেছেন যে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে সংঘাত কমিয়েছেন এবং কাশ্মীর ইস্যুতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন। ভারত এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, কাশ্মীর একটি দ্বিপাক্ষিক ইস্যু এবং তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার কোনো সুযোগ নেই। পাকিস্তান অবশ্য কাশ্মীরে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার পক্ষে।
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
এক্স-এ পোস্টে কেউ কেউ ট্রাম্পের কৃতিত্ব দাবিকে ভারতের জন্য ‘অপমান’ হিসেবে দেখছেন, বলছেন এটি ভারতের বিশ্বগুরু ইমেজের উপর প্রভাব ফেলেছে। অন্যরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই দাবি তার ‘শান্তির দূত’ হিসেবে ইমেজ তৈরির কৌশল।