বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট: যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার কুন্ঠন ও ইউনুসের দ্বন্দ্ব

বাংলাদেশ আজ এক কঠিন রাজনৈতিক সংকটের মুখোমুখি, যেখানে দুই মহাশক্তি—যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া—নিজ নিজ প্রভাব বিস্তার করতে ব্যস্ত, আর দেশটির অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান নোবেলজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনুস সেই দুই শক্তির মাঝে চাপে রয়েছেন। আগামী আগস্টে শেখ হাসিনার সরকার বিদায় নেবার পর স্থিতিশীল ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করা হয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতা হাতে নেয়ার পর থেকেই ইউনুস সরকারের নেতৃত্বে দেশ গভীর রাজনৈতিক অস্থিরতায় নিমজ্জিত হয়েছে।
দেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওকার উজ জামানের স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে সেনাবাহিনীকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। Meanwhile, ছাত্র সংগঠনগুলো নির্বাচন কার্যকরী না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালানোর অঙ্গীকার করেছে। বিরোধী দল বিএনপি ও জামাত-ই-ইসলামীও সড়কে উত্তেজনা তৈরি করতে প্রস্তুত। তবে এই সংঘর্ষের পেছনে রয়েছে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর সরাসরি হস্তক্ষেপ—যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ইউনুস সরকারের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকট মিটানোর ‘হিউমেনিটিয়ারিয়ান করিডোর’ খোলার চেষ্টা করছে, কিন্তু দেশীয় কিছু মহল এটাকে মায়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সহায়তা হিসেবে দেখছে।
অন্যদিকে, সেনাবাহিনী স্পষ্টতই রাশিয়ার দিকে ঝুঁকছে। এপ্রিল মাসে জেনারেল জামানের মাস্কো সফর ও রাশিয়ার সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে মোলাকাত এই পরিবর্তনের নিদর্শন। প্রথমবারের মতো রাশিয়ার নৌবাহিনীর জাহাজ বাংলাদেশে আসার মাধ্যমে সেনাবাহিনী তার রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শন করেছে, যা ইঙ্গিত দেয় তারা ক্ষমতায় আসার জন্যও প্রস্তুত।
এই পরিস্থিতি বাংলাদেশকে একটি গভীর রাজনৈতিক বিভ্রাটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সেনাবাহিনী মনে করছে ইউনুস সরকার ধর্মীয় উগ্রবাদ বাড়িয়ে তুলছে, যেখানে পুলিশের ক্ষমতা ক্রমশ কমছে। সেনাবাহিনী নিজেকে একমাত্র উগ্রবাদের বিরুদ্ধে যোদ্ধা হিসেবে দেখছে। এই সময়ে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে অসন্তোষ ও ক্ষমতালোভের খবর পাওয়া যাচ্ছে, যা সামরিক অভ্যুত্থানের আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।
ভারতের জন্য এই পরিস্থিতি গুরুত্ব বহন করে। শাসক শাখায় ইউনুসের আগমন চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে, যা ভারতের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। বাঙাল উপসাগরে চীনকে ‘গার্জিয়ান’ বলা ও ভারত-বাংলাদেশ ট্রানজিট চুক্তি বাতিল এই অশান্তির অংশ। তবে, জেনারেল জামানের রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ভারতের জন্য একটি নতুন কৌশলগত সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। ভারত-রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী অংশীদারিত্ব এবং রূপপুর নিউক্লিয়ার প্রকল্প এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এখন রাজনৈতিক সংলাপ ও আন্তর্জাতিক শক্তির ভারসাম্যের ওপর। দুই মহাশক্তির কূটনৈতিক মঞ্চে দেশের অবস্থান সুসংহত করতে পারলে অস্থিরতা কিছুটা হলেও প্রশমিত হতে পারে।