শশি থারুরের আওয়াজ: উপনিবেশবাদ থেকে আজকের ভারতের জন্য সংগ্রাম

শশি থারুরের আওয়াজ: উপনিবেশবাদ থেকে আজকের ভারতের জন্য সংগ্রাম

শশি থারুর ভারতের স্বাভিমান ও সম্মানের প্রশ্নে সবসময় সোচ্চার। ২০১৫ সালে অক্সফোর্ড ইউনিয়নে তাঁর ভাষণে তিনি ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের ২০০ বছরের শোষণ ও অত্যাচারের জন্য ক্ষমা ও প্রতীকী ক্ষতিপূরণ দাবি করে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেন। তাঁর বই An Era of Darkness: The British Empire in India এ ব্রিটিশ শাসনের নৃশংসতার তথ্যভিত্তিক বিবরণ দেওয়া হয়েছে। তিনি জালিয়ানওয়ালা বাগ নরসংহারের জন্য নিষ্কপট ক্ষমা এবং কোহিনূরের মতো লুণ্ঠিত সম্পদের প্রতীকী প্রত্যাবর্তনের দাবি জানান।

রাজনৈতিক যাত্রা ও বিতর্ক: চারবারের কংগ্রেস সাংসদ থারুর সবসময় খবরে থাকেন। ২০২২ সালে কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনে তিনি মল্লিকার্জুন খাড়গের কাছে হারলেও তাঁর রাজনৈতিক কদ বেড়েছে। তিনি প্রায়ই দলীয় লাইন থেকে সরে মোদী সরকারের কিছু সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন, যা গান্ধী পরিবারকে অস্বস্তিতে ফেলে। তবে তিনি বিরোধিতার জন্য বিরোধিতায় বিশ্বাসী নন। ব্যক্তিগত জীবনের বিতর্ক এবং গান্ধী পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও, তিনি কংগ্রেসেই রয়েছেন।

পহেলগাম ও জাতীয় ঐক্য: ২০২৫ সালের পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার পর থারুর সরকারের পাশে দাঁড়ান। তিনি অপারেশন সিন্দুর ও সিজফায়ারের মতো সরকারি পদক্ষেপকে সমর্থন করেন, বলেন, “এখন সরকারের সমালোচনার সময় নয়, ঐক্যের সময়।” সরকার তাঁকে আমেরিকায় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব দেয়, যদিও কংগ্রেস তাঁকে তাদের তালিকায় রাখেনি। এটি কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তাঁর ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

অক্সফোর্ড ভাষণ ও বই: ২০১৫ সালে অক্সফোর্ডে “Britain Owes Reparations to Her Former Colonies” বিষয়ে তাঁর ভাষণ ভারতীয় জাতীয়তাবাদের মূল তর্ককে তুলে ধরে। তিনি বলেন, ১৮শ শতাব্দীতে বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের অংশ ছিল ২৩%, কিন্তু ব্রিটিশ শাসনে তা ৪%-এ নেমে আসে। তিনি ব্রিটিশদের রেল, আমলাতন্ত্র ও ঐক্যের দাবিকে খারিজ করে বলেন, মৌর্য, গুপ্ত ও মুঘল শাসনে ভারত ঐক্যের প্রয়াস দেখিয়েছে। ব্রিটিশরা ‘বিভাজন ও শাসন’ নীতির মাধ্যমে ভারতকে বিভক্ত করেছে।

থারুরের পরামর্শ, ব্রিটেনের শিশুদের উপনিবেশবাদের অন্ধকার ইতিহাস শেখানো উচিত, যেমন জার্মানিতে হলোকস্ট শিক্ষা দেওয়া হয়। তিনি কোহিনূরের মতো লুণ্ঠিত সম্পদের প্রতীকী প্রত্যাবর্তন ও জালিয়ানওয়ালার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানান। তাঁর ভাষণ ও বই ভারতীয় ইতিহাসের ত্রাসদায়ক অধ্যায় তুলে ধরে, যা তরুণ প্রজন্মকে শিক্ষিত করার জন্য অমূল্য।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *