চুরুলিয়ায় নজরুলের জন্মোৎসবেও বাংলাদেশের বয়কট, দুই বাংলার সাংস্কৃতিক সেতুতে ফাটল

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম দুই বাংলার সাংস্কৃতিক সেতু। তাঁর জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য সময় বাংলাদেশে কেটেছে। তবে মুহাম্মদ ইউনুস শাসিত বাংলাদেশে যেন নজরুলও ব্রাত্য। সোমবার, ২৬ মে, কবির ১২৬তম জন্মজয়ন্তীতে পশ্চিমবঙ্গের চুরুলিয়ায় ৪৫তম নজরুল মেলায় বাংলাদেশের কোনও কবি, সাহিত্যিক বা শিল্পী উপস্থিত ছিলেন না। অথচ গত বছর এই মেলায় বাংলাদেশের খ্যাতনামা শিল্পী ফেরদৌস আরা গান পরিবেশন করেছিলেন। কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রতি বছর বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করত। এবার কোনও উদ্যোগই তারা নেয়নি।”
চুরুলিয়ার নজরুল মেলা একসময় দুই বাংলার সাংস্কৃতিক মিলনের প্রতীক ছিল। কবির ভাইপোদের উদ্যোগে শুরু হওয়া এই মেলায় বাংলাদেশের শিল্পীরা গ্রামবাসীদের বাড়িতে থেকে অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন। পরে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় এর দায়িত্ব নিলেও বাংলাদেশের উপস্থিতি অব্যাহত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার চন্দন কোনার বলেন, “বাংলাদেশে এখন দেশবিরোধী পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। তাই আমরাও আলাদা করে আমন্ত্রণ জানাইনি।” এই বয়কটে হতাশ গ্রামবাসীরা। কবির ভাইপো কাজী আলি রেজা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনা না করেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সমাধিস্থল পরিষ্কার হয়নি, তরণগুলোও আসাম্পূর্ণ।”
অনুষ্ঠানের শুরু হয় প্রভাত ফেরির মাধ্যমে, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান উত্তম মণ্ডলসহ অধ্যাপকরা অংশ নেন। তবে গ্রামবাসীদের অংশগ্রহণ ছিল নগণ্য। র্যালি শেষে কবি, তাঁর স্ত্রী ও ছেলের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। বীরকুল্টির দশম শ্রেণির ছাত্র সুরজ বাউরির ৪৫০টি আর্টপেপারে আঁকা ২৫ ফুট লম্বা নজরুলের ছবি সংগ্রহশালার বাইরে প্রদর্শিত হয়। কিন্তু গ্রামের দেওয়ালে কবিতার লাইন বা ছবি না থাকায় হতাশা ছড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা রমেশ মণ্ডল বলেন, “নজরুল আমাদের গর্ব। কিন্তু এবারের উৎসব যেন আন্তরিকতার অভাবে ম্লান।”