আমেরিকা থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা, নতুন ঠিকানা কি জার্মানি?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তনে আমেরিকার গবেষণা জগতে ফের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ভিসা বাতিল, আকস্মিক তহবিল এবং কঠোর নীতির কারণে বিজ্ঞানীরা অন্য দেশে সুযোগ খুঁজছেন। এই পরিস্থিতিতে জার্মানি, বিশেষ করে তাদের ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক সোসাইটি, বিজ্ঞানীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় বিকল্প হয়ে উঠেছে।
ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক সোসাইটিতে আমেরিকান বিজ্ঞানীদের আগ্রহ বৃদ্ধি
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গবেষণা নেটওয়ার্ক ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক সোসাইটিতে ২০২৫ সালের বসন্তের জন্য আমেরিকান গবেষকদের আবেদনের সংখ্যা ব্যাপক বেড়েছে। এ বছর আমেরিকা থেকে ৮১ জন মহিলা বিজ্ঞানী আবেদন করেছেন, যা গত বছর ছিল মাত্র ২৫ জন। বিশ্বের অন্যান্য প্রান্ত থেকে আবেদন স্থিতিশীল থাকলেও আমেরিকা থেকে এই বৃদ্ধি গবেষকদের চিন্তাধারায় একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক সোসাইটির সভাপতি প্যাট্রিক ক্রেমার জানান, এই নতুন আবেদনকারীদের প্রায় অর্ধেকই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, এমআইটি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ (NIH) এবং ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া সিস্টেমের মতো শীর্ষস্থানীয় মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে এসেছেন। জার্মান সরকার পরিচালিত এই সোসাইটির অধীনে ৮৪টি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং এর বার্ষিক বাজেট ২ বিলিয়ন ইউরো। বর্তমানে এখানে ৩৯ জন নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী আছেন এবং ২০টি নতুন গবেষণা পদের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া চলছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির প্রভাব
গবেষকদের এই স্থানান্তরের প্রধান কারণ হলো ট্রাম্প প্রশাসনের আন্তর্জাতিক পণ্ডিতদের ওপর কঠোর নীতি। একটি বিতর্কিত নির্দেশনায় হার্ভার্ডের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল। যদিও একটি ফেডারেল আদালত এই পদক্ষেপে অস্থায়ী স্থগিতাদেশ দিয়েছে, তবে এই অনিশ্চয়তা শিক্ষাবিদ মহলে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
জার্মানির ‘১০০০ ব্রেইন’ উদ্যোগ
বৈশ্বিক শিক্ষা ও গবেষণা সম্প্রদায় এই বিষয়টি লক্ষ্য করেছে। ইয়েলের ইতিহাসবিদ টিমোথি স্নাইডার-এর মতো স্বনামধন্য পণ্ডিতরা প্রতিবাদে পদত্যাগ করে বিদেশে চলে গেছেন। এই বাস্তুচ্যুত গবেষকদের ঢেউ অনুমান করে জার্মানি তাদের গবেষণা অবকাঠামো প্রসারিত করতে এবং বৈশ্বিক মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে “১০০০ ব্রেইন” (1000 Brain) নামের একটি উদ্যোগ চালু করেছে। এই উদ্যোগ জার্মানিকে বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের জন্য একটি দারুণ গন্তব্যে পরিণত করছে।