মুঘল সম্রাট আকবর কেন হিন্দু জ্যোতিষীদের পরামর্শ নিয়েছিলেন?

মুঘল সম্রাট আকবর কেন হিন্দু জ্যোতিষীদের পরামর্শ নিয়েছিলেন?

মুঘল সম্রাট আকবর, যিনি ধর্মনিরপেক্ষতা ও সহনশীলতার প্রতীক হিসেবে পরিচিত, তার ছেলে সেলিমের (জাহাঙ্গীর) বিবাহের শুভ সময় নির্ধারণে হিন্দু জ্যোতিষীদের পরামর্শ নিয়েছিলেন। এই ঘটনা শুধু আকবরের জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রতি বিশ্বাসই প্রকাশ করে না, বরং ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধাও প্রতিফলিত করে। ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথের মতে, আকবর ফতেহপুর সিক্রিতে ‘ইবাদতখানা’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যেখানে হিন্দু, জৈন, মুসলিম ও খ্রিস্টান পণ্ডিতদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতেন। সেলিমের জন্মের সময় সাতজন জ্যোতিষী, যাদের মধ্যে কেউ কেউ হিন্দু পঞ্জিকায় এবং কেউ গ্রীক জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন, তাদের রাশিফল তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এই বৈচিত্র্যময় দৃষ্টিভঙ্গি আকবরের উন্মুক্ত মনোভাবের প্রমাণ। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে জাহাঙ্গীরের বিবাহের তারিখ নির্ধারণ তৎকালীন সময়ে ধর্মীয় সীমানা অতিক্রমের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।

আকবরের এই পদক্ষেপ শুধু রাজকীয় ঐতিহ্যের অংশ ছিল না, বরং জ্ঞান ও বিজ্ঞানের প্রতি তার শ্রদ্ধার প্রকাশ ছিল। ঐতিহাসিক সতীশ চন্দ্র উল্লেখ করেছেন, আকবর গ্রহের অবস্থান বিবেচনা করে ব্রাহ্মণ জ্যোতিষীদের সঙ্গে পরামর্শ করতেন। বৈদিক শাস্ত্রে মুহূর্ত নির্ধারণের গুরুত্ব, যেমন বৃহজ্জাতকে বর্ণিত আছে, তাও আকবরের এই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছিল। এই ঘটনা আজকের আন্তঃধর্মীয় সংলাপ ও সাংস্কৃতিক সমন্বয়ের প্রেক্ষাপটে বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। আকবরের এই উদ্যোগ প্রমাণ করে যে জ্ঞান ও শাসন ধর্মের সীমানা অতিক্রম করে, যা আধুনিক বিশ্বেও একটি শিক্ষণীয় উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *