আমেরিকা ভ্রমণে ১২ দেশের মানুষের উপর নিষেধাজ্ঞা! আরও ৭ দেশের উপর কঠোর পদক্ষেপ

মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ১২টি দেশের নাগরিকদের আমেরিকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। এই দেশগুলোর মানুষ আমেরিকায় ভ্রমণ করতে পারবেন না। মার্কিন রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার প্রথম কার্যকালেও ট্রাম্প বহু দেশের মানুষের উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন, যদিও পরে তা তুলে নেওয়া হয়েছিল। এবার আবারও ট্রাম্প বহু দেশের নাগরিকদের আমেরিকায় প্রবেশে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। আমেরিকার নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করে ট্রাম্প আরও সাতটি দেশের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।
এই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাটি সোমবার (জুন ৯, ২০২৫) দুপুর ১২টা থেকে কার্যকর হবে। ট্রাম্প গত বুধবার (জুন ৪, ২০২৫) রাতে একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে এক ডজন দেশের নাগরিকদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দিয়েছেন। এই দেশগুলির মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, বার্মা, চাদ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, নিরক্ষীয় গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান এবং ইয়েমেন। এর পাশাপাশি, বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান এবং ভেনিজুয়েলা থেকে আসা মানুষের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া ও পূর্ববর্তী নিষেধাজ্ঞা
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ঘোষণায় বলেছিলেন, “আমাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং এর জনগণের জাতীয় সুরক্ষা ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করতে হবে।” ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন, যেখানে রাজ্য ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ এবং ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টরকে আমেরিকার প্রতি “শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব” নিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করতে এবং কিছু দেশ থেকে আগত মানুষ জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছিল। সেই রিপোর্ট আসার পর ১২টি দেশের উপর পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা এবং ৭টি দেশের উপর কঠোর নিয়ম কার্যকর করা হয়েছে।
তার প্রথম কার্যকালে, ট্রাম্প ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন, যেখানে ইরাক, সিরিয়া, ইরান, সুদান, লিবিয়া, সোমালিয়া এবং ইয়েমেন—এই সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের আমেরিকা ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। এটি ছিল তার রাষ্ট্রপতি পদের অন্যতম বিশৃঙ্খল এবং বিভ্রান্তিকর সিদ্ধান্তগুলির মধ্যে একটি। এই দেশগুলির যাত্রীদের হয় আমেরিকাগামী ফ্লাইটে উঠতে দেওয়া হয়নি, অথবা নামার পর মার্কিন বিমানবন্দরগুলিতে তাদের আটক করা হয়েছিল। এর মধ্যে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, পর্যটক এবং বন্ধু ও পরিবারের সাথে দেখা করতে আসা মানুষরাও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
আইনি চ্যালেঞ্জ এবং নিষেধাজ্ঞাগুলির পরিবর্তন
এই আদেশটিকে প্রায়শই “মুসলিম নিষেধাজ্ঞা” বা “ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা” হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ট্রাম্পের সামনে অনেক আইনি চ্যালেঞ্জ ছিল। ফলে এতে ক্রমাগত পরিবর্তন আসে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট বেশ কয়েকটি পরিবর্তনের পর এটি অনুমোদন করে। এই নিষেধাজ্ঞা ইরান, সোমালিয়া, ইয়েমেন, সিরিয়া এবং লিবিয়ার যাত্রী ও বিভিন্ন শ্রেণীর অভিবাসীদের প্রভাবিত করেছিল, পাশাপাশি উত্তর কোরিয়ার এবং কিছু ভেনিজুয়েলার সরকারি কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারকেও সমস্যায় ফেলেছিল। ট্রাম্প এবং অন্যান্যরা জাতীয় নিরাপত্তার ভিত্তিতে এই নিষেধাজ্ঞার পক্ষে যুক্তি দিয়েছিলেন যে, এর উদ্দেশ্য ছিল দেশের সুরক্ষা করা এবং এটি মুসলিম বিরোধী পক্ষপাতিত্বের উপর ভিত্তি করে ছিল না। যদিও, রাষ্ট্রপতি হোয়াইট হাউসের জন্য তার প্রথম প্রচারণার সময় মুসলমানদের উপর স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলেছিলেন।