গলা দিয়ে খাবার নামেনি, আর তখনই মৃত্যু! আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার পর হোস্টেলের এই ছবি অনেক কথা বলছে

গলা দিয়ে খাবার নামেনি, আর তখনই মৃত্যু! আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার পর হোস্টেলের এই ছবি অনেক কথা বলছে

১২ই জুনের দুপুর ছিল পরিষ্কার, কিন্তু নিয়তির মুখ মেঘের চেয়েও ঘন কালো হয়ে গিয়েছিল। বলা হয়, বাতাসের কোলে বসা জীবন সবসময় মাটিতে ফেরে না… এই এক অন্ধকার সত্যি, যা আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার সাথে জড়িয়ে আছে।

প্লেনে ভ্রমণকারীদের অনেকেই হয়তো তাদের পরিজনদের বলেছিলেন – আমরা এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেছি… লন্ডন পৌঁছে ফোন করব। কিন্তু, ফ্লাইট ওড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই যা ঘটল, তা মানুষের হৃদয় বিদীর্ণ করে দিয়েছে। মৃতদেহগুলির অবস্থা এমন যে, ডিএনএ পরীক্ষা করে তাদের শনাক্ত করতে হবে। প্লেনে ভ্রমণকারীদের পরিজনদের পাশাপাশি সেই সব মা-বাবা, ভাই-বোনদের ব্যথাও মর্মান্তিক, যাদের ডাক্তার হতে চলা ছেলেরা হোস্টেলে খাবার খাচ্ছিল এবং প্রাণ হারাল।

বি জে হোস্টেলের টেবিলে খাবারের প্লেট, কোনোটিতে অর্ধেক রুটি তো কোনোটিতে সামান্য সবজি, মেঝেতে পড়ে থাকা গ্লাস আর সামনে মৃত্যুর তাণ্ডব… এই হল আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার পর সেই হোস্টেলের ছবি, যেখানে দেশের ভবিষ্যৎ ডাক্তাররা খাবার খাচ্ছিলেন। এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট AI-171 উড্ডয়নের পর এই মেডিকেল কলেজের বিল্ডিংয়েই ধাক্কা মেরেছিল, যা প্রায় ২০ জন মেডিকেল শিক্ষার্থীর জীবন কেড়ে নিয়েছে।

মৃত্যুর তাণ্ডব শুরু হল

বিমানটি বিল্ডিংয়ে ধাক্কা মারতেই মৃত্যুর তাণ্ডব শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই চারদিকে ধ্বংসযজ্ঞ তার চিহ্ন রেখে গিয়েছিল। যারা এর আওতায় আসেনি, তারা ভয়ে সন্ত্রস্ত ছিল। কোনোমতে প্রাণ বাঁচানোর লড়াই চলছিল। কেউ সিঁড়ির দিকে দৌড়াল তো কেউ দ্বিতীয় তলা থেকেই ঝাঁপ দিল।

হোস্টেল থেকে যে ছবিগুলো সামনে এসেছে, তা বলে দিচ্ছে দুর্ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে কতটা আতঙ্ক ছিল। দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকারী দল হোস্টেলে পৌঁছায় এবং মৃতদেহ ও আহত ছাত্রদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর পেয়েই ছাত্রদের পরিজনরা হাসপাতালে পৌঁছাতে শুরু করেন। কাঁদতে কাঁদতে এবং নিজেদের সন্তানদের জন্য ছটফট করতে থাকা পরিজনদের আর্তনাদ হৃদয় বিদীর্ণ করে দিচ্ছে।

দ্বিতীয় তলা থেকে ঝাঁপিয়ে ছাত্রের প্রাণরক্ষা

হোস্টেলে ছেলের আহত হওয়ার খবর পেয়ে রমিলা আহমেদাবাদের সিভিল হাসপাতালে পৌঁছান। এখানে তিনি জানান যে, তার ছেলে লাঞ্চ ব্রেকের সময় হোস্টেলে গিয়েছিল। বিমান সেখানেই বিধ্বস্ত হয়। ছেলে সুরক্ষিত আছে এবং তিনি তার সাথে কথা বলেছেন। সে দ্বিতীয় তলা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিল, তাই তার কিছু আঘাত লেগেছে।

হাসপাতালে আর্তনাদের সমুদ্র

প্লেনে প্রাণ হারানো যাত্রীদের সাথে যা ঘটেছে, তা বর্ণনা করা যায় না। দগ্ধ শরীর এবং নীরব মোবাইল ফোনে ব্যথা আর আসাম্পূর্ণ গল্প চাপা পড়ে গেছে। নিজেদের স্বপ্ন নিয়ে যারা লন্ডন যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিল, তারা আর কখনো ফিরবে না। তাদের শরীর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এক মহিলার মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পাওয়া গেছে।

আমরা আপনাকে এই মর্মান্তিক ছবিগুলো দেখাতে পারছি না। তবে মৃতদেহগুলোর অবস্থা কেমন, তা এই থেকে অনুমান করা যায় যে, এখন তাদের পরিচয়ের জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। সম্পূর্ণ মৃতদেহ পাওয়ার কোনো আশা নেই। ভাগ্যের নিষ্ঠুরতা এমনই যে, এখন পরিজনরা শরীরের কিছু অংশ পাবেন। এই ব্যথার সাগরের মূল্য কোনো ক্ষতিপূরণ দিয়ে মেটানো যাবে না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *