শুক্রবার সকালে ইজরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো ইরান আক্রমণ করে। ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইজরায়েল কাটজ নিজেই এই হামলার কথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা শত্রু দেশের ওপর decisive (নির্ণায়ক) হামলা চালিয়েছি।”

এই হামলায় ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক কর্মকর্তাদের একজন, মেজর জেনারেল হুসেন সালামি, নিহত হয়েছেন।

ইরানের সরকারি সংবাদমাধ্যম সালামির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে জানিয়েছে যে, ইজরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আঘাত হানার সময় তিনি IRGC-এর সদর দফতরেই (Headquarters) উপস্থিত ছিলেন। সালামির মৃত্যুতে ইরান শুধু একজন শক্তিশালী জেনারেলকে হারায়নি, বরং ক্ষমতার একটি পুরো স্তম্ভ ভেঙে পড়েছে। তার সঙ্গে আরও অনেক উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা এবং জ্যেষ্ঠ পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন।

IRGC-এর সেই বস, যিনি সরাসরি খামেনিকে রিপোর্ট করতেন

হুসেন সালামি ২০১৯ সাল থেকে IRGC (Islamic Revolutionary Guard Corps)-এর প্রধান ছিলেন। এটি ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে পরিচিত, যা কেবল ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে না, বরং দেশের ভেতরের বিরোধিতা দমন করে এবং বাইরে সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন এবং লেবাননে ইরানের এজেন্ডা চালায়। সালামির মর্যাদা এতটাই উঁচু ছিল যে, তিনি সরাসরি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে রিপোর্ট করতেন। কৌশল, পাল্টা আক্রমণ, গোপন অভিযান—প্রতিটি বড় ফাইল প্রথমে সালামির টেবিল হয়ে যেত।

ইরানের ‘ক্ষেপণাস্ত্র মানব’ ছিলেন সালামি

সালামিকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র শক্তির স্থপতি (Architect) হিসেবে গণ্য করা হতো। কয়েক মাস আগে তাকে IRGC-এর একটি গোপন ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতে দেখা গিয়েছিল, যেখানে নতুন বিশেষ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি হচ্ছিল। ২০২৪ সালে যখন ইরান ইজরায়েলের উপর সরাসরি শত শত ড্রোন এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তেহরান থেকে নিক্ষেপ করেছিল, তখন সেই পুরো অভিযানের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন সালামি। তার বিবৃতি ছিল, “আমাদের জবাব এমন হবে যে শত্রু আবার চোখ তোলার আগে শতবার ভাববে।”

ইঞ্জিনিয়ার থেকে জেনারেল হওয়ার সফর

হুসেন সালামি ১৯৬০ সালে ইস্পাহান প্রদেশের গোলপায়গান শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন যখন ১৯৮০ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধ শুরু হয়। তিনি পড়াশোনা ছেড়ে অস্ত্র হাতে তুলে নেন এবং IRGC-তে যোগ দেন। তার যুদ্ধনীতি এবং প্রযুক্তিগত বোঝাপড়া তাকে দ্রুত উচ্চ পদে পৌঁছতে সাহায্য করে। IRGC-এর অ্যারোস্পেস ইউনিটের প্রধান থাকাকালীন তিনি ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে বৈশ্বিক শক্তিগুলোর জন্য মাথাব্যথার কারণ করে তোলেন। তার এই কার্যকলাপের কারণেই আমেরিকা তাকে কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিল।

সালামি সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য

সালামি তার আক্রমণাত্মক মন্তব্য এবং কট্টর জাতীয়তাবাদের জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি তার বক্তৃতায় আমেরিকাকে বারবার সতর্ক করতেন। ইজরায়েলকে প্রকাশ্যে হুমকি দিতেন। মাহসা আমিনি প্রতিবাদের সময় তিনি এটিকে সরাসরি বিদেশি ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেছিলেন। এমনকি তিনি কোভিড-১৯ কেও আমেরিকার একটি জৈবিক ষড়যন্ত্র বলেছিলেন।