একসময় লবণ-হলুদ বিক্রি করতেন, এখন প্রতি মিনিটে আয় করছেন ৩ কোটি টাকা, মাস্ককেও ছাড়িয়ে গেলেন!

কে ভেবেছিল যে খবরের কাগজ বিলি করা এবং দুধ বিক্রি করা একটি ছেলে একদিন এমন একটি ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য গড়ে তুলবে, যার প্রতিদিনের আয় হবে কোটি কোটি ডলার? আমরা কথা বলছি স্যাম ওয়ালটনের, যিনি ওয়ালমার্টের মতো খুচরা চেইন তৈরি করেছেন, যা আজ বিশ্বজুড়ে এক নম্বরে।
লবণ-হলুদ বিক্রির দোকান থেকে শুরু যাত্রা
এটা জেনে অবাক হতে হয় যে এত বড় খুচরা চেইনের শুরুটা এমন একটি দোকান থেকে হয়েছিল যেখানে প্রথমে লবণ এবং হলুদ বিক্রি করা হতো। স্যাম ওয়ালটন ১৯১৮ সালের ২৯ মার্চ ওকলাহোমার কিংফিশার নামক একটি ছোট শহরে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে তিনি খবরের কাগজ বিতরণ, দুধ বিক্রি এবং ম্যাগাজিনের সাবস্ক্রিপশন বিক্রি করার মতো কাজ করেছেন।
কলেজের দিনগুলোতেও ওয়েটারের কাজ করতেন
স্যাম ওয়ালটন মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ডিগ্রি লাভ করেন। কলেজের দিনগুলোতে তিনি রেস্তোরাঁয় ওয়েটারের কাজ করে নিজের খরচ চালাতেন। ১৯৪০ সালে স্নাতক হওয়ার পর তিনি জে.সি. পেনি নামক খুচরা কো ম্পা নিতে চাকরি শুরু করেন। বেতন ছিল মাসে মাত্র ৭৫ ডলার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি মার্কিন সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৪৫ সালে যখন যুদ্ধ শেষ হয়, তখন স্যাম ওয়ালটনের বয়স ছিল মাত্র ২৬ বছর। এরপর তিনি ২৫,০০০ ডলার ঋণ নিয়ে তার প্রথম মুদি দোকান শুরু করেন। এই অর্থ তিনি তার স্ত্রী হেলেনের সঞ্চয় এবং কিছু ধার নিয়ে সংগ্রহ করেছিলেন।
উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা ব্যবসার চেহারা বদলে দিয়েছে
স্যাম ওয়ালটন বিশ্বাস করতেন যে, যদি পণ্য কম দামে বিক্রি করা হয় এবং বেশি পরিমাণে বিক্রি হয়, তাহলে লাভও বেশি হবে। এই একই চিন্তাভাবনা তিনি আরকানসাসের নিউপোর্ট শহরে তার প্রথম দোকানে গ্রহণ করেন। তার নতুন চিন্তাভাবনার ফলস্বরূপ, তিন বছরের মধ্যেই তার বিক্রি আড়াই লাখ ডলার ছাড়িয়ে যায়।
১৯৬২ সালে প্রথম ওয়ালমার্ট স্টোর
১৯৬২ সালে স্যাম আরকানসাসে প্রথম ওয়ালমার্ট স্টোর খোলেন। এরপর ওয়ালমার্ট যেন খুচরা বাজারে এক নতুন বিপ্লব নিয়ে আসে। তাদের কম দাম এবং ভলিউম-ভিত্তিক ব্যবসায়িক কৌশল সফল হয়।
প্রতিদিনের আয় ১.৬৪ বিলিয়ন ডলার
২০২৪ সালে ওয়ালমার্টের শেয়ারে ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি রেকর্ড করা হয়েছে, যা ওয়ালটন পরিবারের সম্পদে আরও বৃদ্ধি এনেছে। কো ম্পা নির দৈনিক গড় বিক্রি প্রায় ১.৬৪ বিলিয়ন ডলার। ওয়ালমার্ট আজ বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ গ্রাহকের জন্য একটি বিশ্বস্ত নাম হয়ে উঠেছে। ই-কমার্সের যুগে ওয়ালমার্টও তার প্রভাব বিস্তার করেছে। জেট.কম (Jet.com)-এর মতো ডিজিটাল সংস্থা অধিগ্রহণের মাধ্যমে ওয়ালমার্ট তার অনলাইন ব্যবসাকে আরও শক্তিশালী করেছে।
১৯৯২ সালে স্যাম ওয়ালটন পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন
১৯৯২ সালে স্যাম ওয়ালটন ৭৪ বছর বয়সে ক্যান্সারে মারা যান। তিনি ৫০ বিলিয়ন ডলারের একটি কো ম্পা নি রেখে গেছেন। এর সাথে তিনি এমন একটি সিস্টেমও তৈরি করে গেছেন, যা তার স্ত্রী হেলেন এবং তাদের চার সন্তান রব, জন, জিম এবং অ্যালিস পরিচালনা করেছেন। তারা ‘ওয়ালটন এন্টারপ্রাইজেস’ (Walton Enterprises) নামের একটি ফ্যামিলি হোল্ডিং কো ম্পা নির মাধ্যমে ওয়ালমার্টে তাদের অংশীদারিত্ব সুরক্ষিত রেখেছেন।